দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা এখনই করোনার টিকা পাচ্ছেন না।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধক টিকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিবন্ধনের বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেও শিক্ষার্থীদের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং ১৭ মে থেকে হল খোলার ঘোষণা দেন। আবাসিক হল খুলতে প্রস্তুতিও নিতে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে করোনা টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী, হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় আসছেন না। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থীকে মেসে-হোস্টেলে থাকতে হয়।
জবিতে ছাত্রীদের হল একটি। হলটি উদ্বোধন করা হলেও কিছু কাজ বাকি থাকায় কবে নাগাদ ছাত্রীরা উঠতে পারবেন তা নিশ্চত নয়।
এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে টিকা না পেলে শিক্ষার্থীদের সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার মতো জনবহুল ও ঘিঞ্জি পরিবেশে শিক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে ইউজিসিকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে ইউজিসি থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার নোটিশের ব্যাপারে অবগত ছিলাম না।’ পরে তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানান, ‘মন্ত্রণালয় যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা আছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে বলেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আবাসন ব্যবস্থা নেই।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেসে থাকেন। গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে—এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইউজিসিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি।
এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান। তিনি জানান, ‘ইউজিসি থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে না পারায় আমরা কোনো শিক্ষার্থীর তালিকাই পাঠাতে পারিনি। এ ব্যাপারে আমরা ইউজিসি বরাবর চিঠি দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাইনি। আর টিকা দেয়ার বিষয়টি আমাদের নাগালের বাইরে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকা নিতে ২৪ মের মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।