করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা খাত নানা ঝুঁকিতে আছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, তিনি আশঙ্কা করছেন, স্কুলে ঝরে পড়ার হার বাড়তে পারে।
করোনাকালীন ও করোনা পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত রাত মত বিনিময় করেছেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন বলে বুধবার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ক্লাস চলছে অনলাইনে, টেলিভিশনে। কিন্তু বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে আনুমানিক প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী পুরোপুরি শিক্ষার বাইরে রয়ে গেছে।
তবে মন্ত্রীর দাবি, এই সংখ্যাটা ১০ শতাংশ। তবে এটাও বিশাল সংখ্যা জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘আমরা কোনো একজন শিক্ষার্থীকে পেছনে রেখে আগাতে চাই না।’
আবার করোনা আয় কমিয়ে দিয়েছে বহু পরিবারের। নিম্ন মধ্যবিত্ত বহু পরিবার নিম্ন আয়ের তালিকায় চলে গেছে। আর নিম্ন আয়ের বহু পরিবারের শিক্ষার ব্যয় বহন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
- আরও পড়ুন: ধনীরা অনলাইনে, শিক্ষার বাইরে গরিব
এই অবস্থায় শিশুদেরকে স্কুলে পাঠানোর বদলে পরিবারগুলো তাদেরকে আয়বর্ধক কাজে লাগাতে পারে বলে শঙ্কিত শিক্ষামন্ত্রী।
দীপু মনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেতে পারে।’
রাজধানীর বন্ধ থাকা কদমতলী এলাকার রেঁনেসা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এক শিক্ষার্থী
করোনার কারণে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া যায়নি। আগামী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস না হওয়ায় সিলেবাস শেষ করাও চ্যালেঞ্জ। ব্যবহারিক ক্লাস অনলাইনে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
করোনার কারণে শিক্ষায় বৈষম্য বেড়েছে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ধনী পরিবারগুলো অনলাইনে ক্লাস করলেও গরিব পরিবারগুলো শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে।
- আরও পড়ুন: শিক্ষায় নতুন বৈষম্য অ্যাসাইনমেন্টে
আবার পরীক্ষা না নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়নেরর যে পদ্ধতি নেয়া হয়েছে, সেটাও নতুন বৈষম্য তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, শিশুদের একটি বড় অংশই অ্যাসাইনমেন্টের বাইরে রয়ে যেতে পারে।
অ্যাসাইনমেন্টে মূল্যায়নের উদ্দেশ্য শিশুদের দুর্বলতা নির্ধারণ করে পরবর্তী বছরে পাঠ্যক্রম সাজানো। কিন্তু ‘দুর্বল’ শিশুরা এই প্রক্রিয়ার বাইরে থাকলে আগামী বছরের পাঠ্যক্রমেও পুরো বিষয়টি আসবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
- আরও পড়ুন: করোনায় শিক্ষার বাইরে এক তৃতীয়াংশ পরিবার
এর বাইরে শিশুদের মানসিক সমস্যার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রী। বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের শিশুরা সাইকলজিক্যাল বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে।’
করোনায় শিক্ষাখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তা করেছে জানিয়ে মন্ত্রী সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাসের কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: বন্ধ হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন, শিশুরা ভর্তি হবে কোথায়
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো এর নেতৃত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ টোমো হোযুমি।
কারিগরিও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক।
রাজধানীর ডেমরা এলাকায় নিম্ন আয়ের একটি পরিবারে লেখাপড়া করছে শিশুরা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সভায় মিয়া সেপ্পো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেয়ার বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চান।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা সরকার ভাবছে না।
কারণ হিসেবে দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এখানে ফিজিক্যাল ডিসটেন্স (সামাজিক দূরত্ব) মেইনটেইন করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।
‘পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিশুদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে করোবার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।’
যদি ও শিশুদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম, কিন্তু তারা নীরব বাহক হতে পারে বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চান না জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘তাই সরকার এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করছে।’