পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শুল্ক আরোপের আদেশ জারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ আমদানি শুরুর আগেই তারা বাড়িয়ে দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
দেশে পাইকারি পণ্যের সবচেয়ে বড় মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ভারত থেকে পণ্য আসার প্রধান দুই স্থল বন্দর বেনাপোল ও দিনাজপুরের হিলি থেকে পাওয়ার খবরে এমন তথ্যই জানা গেছে।
খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারেই রোববার প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা দোকানে এক দিন আগেও যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার মধ্যে, সেই পেঁয়াজের দাম রাতারাতি হয়ে গেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক আড়তদার বেশি লাভের আশায় পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।
রোববার দুপুরে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, সব আড়তেই পেঁয়াজের মজুত পর্যাপ্ত। তবে অনেক আড়তের দোকানই বন্ধ। খোলা আড়তগুলো থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছিল, খুচরা বাজারে যা ৭০ টাকা। অথচ এক দিন আগেও পাইকারিতে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ।
নতুন শুল্কহারযুক্ত ভারতের পেঁয়াজ চট্টগ্রাম আসার আগেই দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে একজন আড়তদার বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। প্রতি বস্তায় অনেক পচা-গলা পেঁয়াজ থাকে। হিলিতে দাম বাড়ায় আড়তেও দাম বেড়েছে।
মেসার্স গনি মিয়া আড়তের ম্যানেজার জানান, স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন। বেপারিরা সেখান থেকে খাতুনগঞ্জের আড়তে আনেন বা পৌঁছে দেন। তাদের নির্ধারিত দামে কমিশনের ভিত্তিতে আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, ‘মানভেদে ভারতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার এসব পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা।’
পাইকারি বাজারের প্রভাব স্বভাবিকভাবেই গিয়ে পড়েছে খুচরা বাজারে। রোববার মোমিন সড়কের মেসার্স হক স্টোরে প্রতি কেজি বড় ও ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ টাকায়।
একাধিক সূত্র বলছে, চট্টগ্রামে ১০ ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সেই সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করেননি চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা আমদানিকারকদের মালামাল আড়তে রাখি। দাম বাড়ানো-কমানো আমাদের হাতে নেই। আমদানিকারকরা যে দামে বলেন, সে দামেই বিক্রি করি। সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। এখন ওপেন মার্কেট। যে কেউ আমদানি করতে পারেন।’
বেনাপোল
বেনাপোলে আমদানিকারক জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মালিক আল মামুন জানান, সবশেষ ভারত থেকে ৩৮ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। শুল্ক আরোপের পর কেজি প্রতি তা ৫৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়বে।
তবে আগে খোলা এলসির পণ্যই এখনো আমদানি হচ্ছে বন্দর দিয়ে। নতুন করে শুল্ক আরোপের পর নতুন কোনো এলসির পেঁয়াজ এখনও আমদানি হয়নি।
যশোর চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন। অথচ শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ এখনও দেশে আমদানিই শুরু হয়নি।’
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (অ. দ.) আবদুল জলিল বলেন, ‘আজ (রোববার) বন্দর দিয়ে ২৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। পেঁয়াজের চালানগুলো দ্রুত খালাস করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
হিলি
ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার একদিনের ব্যবধানেই দিনাজপুরের হিলিতে রোববার কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।
হিলির পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিন আগে ভারতীয় যে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, রোববার তা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ার কারণে ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে।
ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। আজকে ৪৫ টাকা চাচ্ছে। এভাবে পেঁয়াজ কেনা সম্ভব না।’
হিলি বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা শাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নতুন করে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে আমদানিকারকরা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি।’
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশিদ হারুন বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে সে দেশের সরকার পেঁয়াজের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে।
‘হঠাৎ করে পেঁয়াজের ওপর শুল্ক আরোপ করাতে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম আরও অনেকটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। আমরা চাই দুদেশের কর্মকর্তারা বৈঠকের মাধ্যমে এর একটি সুরাহা করুন।’
প্রসঙ্গত, ভারত এযাবৎ বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুল্ক আরোপ করেনি। হঠাৎই দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। যুক্তি হিসেবে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় জনসাধারণের কথা চিন্তা করে দেশটির বাজারে পেঁয়াজের মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায় সে জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রোববার থেকে এটি কার্যকর হয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।