বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরজুড়ে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। একই সময়ে মূল পরিশোধ বা ভাঙানোর পরিমাণ ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর পরিমাণ ৩ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি, যা সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে সরকারকে সুদবাবদ ৪৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে, যা অর্থবছরের শেষ মাসেও অব্যাহত ছিল। এই অবস্থায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেক বেশি পরিমাণে বাড়ছিল। এতে সরকারের সুদ পরিশোধের ব্যয়ও অনেক বেশি বেড়ে যায়।
সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফা বা সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ছে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপ করে আসছে সরকার।
সরকারের বিভিন্ন শর্তের মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে আয়কর রিটার্ন সনদ বাধ্যতামূলক করা, ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশ কমানো, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা, মুনাফার ওপর উৎস করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা।
এ ছাড়া দুর্নীতি কিংবা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমে গেছে।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ এবং তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিস ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।