সরকারের তরফ থেকে মূল্য বেঁধে দেয়া হলেও কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নিয়ে নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। রাজধানীতে ২৫ থেকে ৩০ ফুট আকারের একেকটি বড় গরুর চামড়া মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে চামড়া সংগ্রহকারী মৌসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তাদের ভাষ্য, যে দাম হওয়ার কথা তার অর্ধেক মূল্যে বেচে দিতে হয়েছে চামড়া। বলা যায়, সিন্ডিকেটের হাতেই ছিল চামড়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। এর মধ্যেই রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে আনা হয় কোরবানি পশুর চামড়া। কিন্তু সংগ্রহকারী সংশ্লিষ্টরা ন্যায্যমূল্য পাননি। তাদের সবার মধ্যেই দাম নিয়ে ছিল ক্ষোভ। এখানে বড় আকারের কাঁচা চামড়ার বিক্রি মূল্য ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। আর মাঝারি গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং ছোট আকারের চামড়ার দাম দেয়া হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
সায়েন্সল্যাব মোড়ে মৌসুমি ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র দাস বলেন, ‘৭০০ টাকা করে প্রতি পিস চামড়া কিনে নিয়ে এসে এখানে এসে দেখি, দাম দেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা।’
আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী মুকুল বলেন, ‘বড় বড় চামড়া ৮০০ টাকার বেশি বলা হচ্ছে না। সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়া হয়েছে।’
ঈদের আগে সরকার রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। কোনো গরুর চামড়া ২৫ বর্গফুট হলেও সরকার নির্ধারিত দামে তা হওয়ার কথা অন্তত ১২৫০ টাকা। কিন্তু কোনো চামড়ার দামই হাজার টাকা বলতে দেখা যায়নি আড়তদারদের। বরং ইচ্ছেমতো দামে বেচাকেনা হয় চামড়া। আর ছাগলের চামড়ার ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। যাও নেয়া হয়, প্রতি পিসে এক কাপ চায়ের দামও দেয়া হয়নি। ধরা হয় ৫ থেকে ১০ টাকা।
রাজধানীর সবচেয়ে পুরনো চামড়ার আড়ত লালবাগের পোস্তাতেও পরিস্থিতির ভিন্নতা ছিল না। অভিযোগ আছে, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করেনি কোনো আড়তদার।
তাদের তরফ থেকে বলা হয়, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি, তাই বেশি দামে চামড়া কেনা যাচ্ছে না।
সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে সংগ্রহ করা হয় পশুর চামড়া। মাদরাসা ও এতিমখানার চামড়াই এখানে বেশি আসে। দামের ক্ষেত্রে সেই মাদরাসা-এতিমখানা কর্তৃপক্ষেরও ছিল হতাশা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়শনের দাবি, কাঁচা চামড়া নিয়ে অভিযোগ থাকলেও লবণ দেয়া চামড়া কেনা-বেচা হবে সরকার বেঁধে দেয়া দামেই। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় এ বছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘পোস্তায় চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। বেঁধে দেয়া দামেই বেচা-কেনা হচ্ছে চামড়া।’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা খুচরা পর্যায়ে বিক্ষিপ্তভাবে কেনা-বেচা করছে। এতে পুরো বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে যারা বিক্রি করছেন, তারা ন্যায্য দামই পাচ্ছেন।’
আগের বছরগুলোতেও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেঁধে দেয়া হলেও তা মানা হয়নি। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে নামমাত্র্র মূল্যে কিনে নেয়া হয়েছে পশুর চামড়া। এবার চামড়ার বেঁধে দেয়া দাম কিছুটা বাড়ানো হলেও তার সুফল বিক্রেতা পর্যায়ে পৌঁছেনি।