বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেনাপোল চেকপোস্টে হুন্ডির জমজমাট কারবার

  •    
  • ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ২১:৪২

বেনাপোল স্থল বন্দরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও দোকানদাররা চেকপোস্ট এলাকায় গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিদিন ভারত ও বাংলাদেশে টাকা, রুপি ও ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচার করে চলেছে। এসব মুদ্রার বিনিময় মূল্যও তারা নিজেদের ইচ্ছামাফিক নির্ধারণ করছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে অবাধে চলছে অবৈধ হুন্ডির কারবার। হুন্ডির মাধ্যমে অবাধে ভারতে পাচার হচ্ছে টাকা, রুপি ও ডলার। প্রশাসন নজরদারি বাড়ালেও হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা-ডলার পাচার বেড়েই চলেছে।

আন্তর্জাতিক এই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। আর এসব হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেনাপোলের কিছু মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী এবং চেকপোস্টে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এন্টারপ্রাইজ নামীয় দোকানগুলো।

মানি এক্সচেঞ্জ মালিক ও দোকানদাররা চেকপোস্ট এলাকায় গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিদিন ভারত ও বাংলাদেশে টাকা, রুপি ও ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচার করে চলেছে। এসব মুদ্রার বিনিময় মূল্যও তারা নিজেদের ইচ্ছামাফিক নির্ধারণ করছে।

সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্যে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে কোনো ধরনের হিসাব-নিকাশ ছাড়াই। একইসঙ্গে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। স্থানীয় প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।

বেনাপোল স্থল বন্দরে সারি সারি দোকানে চলে অবৈধ হুন্ডির কারবার। ছবি: নিউজবাংলা

হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাচারে জড়িতরা চেক পোস্টের বিভিন্ন মার্কেটে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে বসে আছে। এসব দোকানে মালামাল না থাকলেও সব সময় মানুষের ভিড় লেগে থাকে। টাকা পাচারের এই ব্যবসা সামলাতে একেকটি দোকানে ৭/৮ জন করে কর্মচারী থাকে। তারা ভারতে যাওয়া যাত্রীদের নানা প্রলোভন ও পথে নানা বিপদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা ও ডলার হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের প্ররোচনা দিয়ে থাকে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বজলুর রহমান জানান, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচারের জন্য বেনাপোল চেকপোস্টেই গড়ে উঠেছে বেশকিছু ট্রাভেল এজেন্সি, কম্পিউটারের দোকান, স্টোর, ট্রেডার্স ও এন্টারপ্রাইজের বাহারি নামের ছোট ছোট সাইনবোর্ডযুক্ত দোকান। এসব দোকানের লোকজনের কাজই হলো দালালি ও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা।

এসব দোকান থেকেই বিভিন্ন ধরনের চিরকুটের মাধ্যমে ও মোবাইল ফোনে তাদের লোক দিয়ে পাচার করা হচ্ছে হুন্ডির টাকা ও ডলার। এসব হুন্ডি ব্যবসায়ী প্রতিরোধ করতে প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না টাকা ও ডলার পাচারের অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা।

চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলকেন্দ্রিক হুন্ডি কারবারিদের যশোর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কলকাতা, এমনকি মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। চিরকুট, টোকেন, কুরিয়াার সার্ভিস, মোবাইল ফোন ও টিটির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতবদল হয়ে থাকে এখানে।

অভিযোগ রয়েছে যে কথিত মানি চেঞ্জারের নামে একশ্রেণির এন্টারপ্রাইজ, স্টোর, ট্রেডার্স, ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিসের স্টাফ ও আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক-হেলপাররা অবৈধ মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ‘বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। কেউ চিকিৎসা, কেউ বেড়াতে কেউবা ব্যবসায়িক কাজে ভারতে যান। ভারতে এসব যাত্রীর মোটা অঙ্কের টাকা ও ডলার প্রয়োজন হয়। ভারতে যাওয়ার সময় বা সেখানে যাওয়ার পর ব্যবসা বা চিকিৎসার জন্য কারো টাকার প্রয়োজন হলে তারা এসব মানি চেঞ্জার ও দোকানের মাধ্যমে টাকা বা ডলার বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে থাকে।

যশোর ৪৯ বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাচারের সময় ৮৮ হাজার ৪০০ ডলার, ২৬ হাজার কানাডিয়ান ডলার, ৯ লাখ ৯২ হাজার ভারতীয় রুপি, ৫৭ হাজার সৌদি রিয়াল ও ২৬ লাখ টাকা জব্দ করেছে বিজিবি। এ সময় ১০ হুন্ডি কারবারিকে আটক করা হয়।

গত এক বছরে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাসহ ১০ হুন্ডি পাচারকারী বিজিবির হাতে আটক হলেও তারা কেউই এই অবৈধ কারবারে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক নন। তারা টাকার বিনিময়ে বাহক হিসেবে এসব হুন্ডির টাকা পাচার করে থাকেন। এভাবে প্রকৃত হুন্ডি কারবারিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোলের কয়েকজন মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ী ও দোকানদার বলেন, “আমাদের এখানে এই ব্যবসাটা গোপনে চললেও তা ‘ওপেন সিক্রেট’। সবাই জানে আমাদের এখানে টাকা বা ডলার জমা দিলে চিরকুট বা ফোনের মাধ্যমে ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্ট, কোলকাতা বা দেশটির যে কোনো শহরে নির্দিষ্ট এজেন্টের কাছ থেকে উত্তোলন করা যায়। আবার কখনও কখনও ভারতের এজেন্টের মাধ্যমে বনগা থেকে ‘গোগল ফোন পে’ বা ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা করা হয়ে থাকে।”

হুন্ডি ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট এসব ব্যবসায়ীল দাবি, তাদের এই ব্যবসা মানুষের উপকার‌ করে থাকে। তারা শুধু শতকরা ২০ থেকে ৩০ পয়সা কমিশন পান। বাংলাদেশের কেউ চিকিৎসা করাতে গিয়ে টাকার ঘাটতি হলে বা কোনো ব্যবসায়ী ভারত থেকে মালামাল কিনতে গিয়ে টাকার সংকটে পড়লে তাদের মাধ্যমে এখান থেকে টাকা ভারতে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে টাকা কিভাবে যায়- এমন প্রশ্নে তারা বলেন, ‘ভারতে যারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের কিছু কমিশন এজেন্ট বেনাপোলে আছে। তারা এসব টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে জমা করে দেয়।

‘আসলে এসব টাকা ভারতে কিভাবে যায় তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে আমাদের ধারণা এসব টাকার বড় একটি অংশই মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানে ব্যবহার হয়ে থাকে।’

বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘চেকপোস্টে মানি চেঞ্জারের পাশাপাশি বেশকিছু দোকানে অবৈধ টাকা-পয়সা লেনদেন হয়ে থাকে। পুলিশ বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কয়েকজনকে আটক করেছে। যাত্রীদের সচেতন করার জন্য পুলিশ কাজ করছে। বেনাপোল চেকপোস্টে কোনো যাত্রী যাতে হয়রানির শিকার না হয় পুলিশ সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।’

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল বলেন, ‘গত এক বছরে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ ১০ হুন্ডি কারবারিকে আটক করা হয়েছে। চোরাকারবারিরা ডলার, রুপি ও টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে থাকে। বিজিবির গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায় হুন্ডি পাচার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর