লেনদেন খরা কাটতে থাকার মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার লেনদেন নেমে এসেছে ছয় শ’ কোটির ঘরে। তবে আগের দিনের চেয়ে সামান্য বাড়লেও কমেছে সূচক।
ডিসেম্বরে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজারে লেনদেনে গতি আসতে শুরু করে চলতি বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে এসে। ওই সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার লেনদেন ১৯ কর্মদিবস পর ৫০০ কোটি টাকা অতিক্রম করে।
এরপর গত সপ্তাহের প্রথম চারদিনই লেনদেন বেড়ে মঙ্গল ও বুধবার ৪৮ কর্মদিবস পরে ৯ শ’ কোটির ঘরে লেনদেন হয়। বুধবার গ্যাসের বর্ধিত দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ঘোষণার পরদিন ধাক্তা খায় পুঁজিবাজার।
মূল্য বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় জ্বালানি বিভাগ জানায়, খোলাবাজার থেকে চড়া দামে এলএনজি কিনে গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার।
বিশেষ করে যেসব শিল্পে গ্যাসের বাড়তি দামের বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে, সেসব শিল্পসংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে যায়। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৫৯০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, যা বুধবারের চেয়ে ৩৪৩ কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ কম।
সেখান থেকে রোববার কিছু বাড়লেও তা রয়েছে ছয় শ’ কোটির ঘরেই। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৬৯২ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের কর্মদিবসের চেয়ে ১০২ কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা বেশি।
দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে প্রায় আড়াই গুণ। ১২৬টি কোম্পানির দরপতন হয়েছে। বিপরীতে দর বেড়েছে ৫৩টির। আর অপরিবর্তিত দরে বা ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে ১৮৫টি কোম্পানির।
এর প্রভাবে সূচক কমেছে ৯ পয়েন্ট। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৫৫ পয়েন্টে।
গত দুই কর্মদিবসেই নেতিবাচক চিত্র দেখা গেল গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল বস্ত্র, সিমেন্ট, জ্বালানি ও সিরামিকসের মতো খাতগুলোতে। বস্ত্র খাতে ১৯টি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে ৩১টির। বিপরীতে মাত্র ৩টি কোম্পানির দর বেড়েছে।
সিমেন্ট এবং জ্বালানি ও শক্তি খাতে কোনো কোম্পানির দর বৃদ্ধি দেখা যায়নি। সিমেন্ট খাতের ৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪টির লেনদেন হয়েছে আগের দরেই। ৩টির দরপতন হয়েছে।
জ্বালানি খাতে ১৮টির লেনদেন হচ্ছে সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে বা ফ্লোর প্রাইসে। সঙ্গে দরপতন হয়েছে আরও ৫টির। খাদ্য খাতেও কোনো কোম্পানির দর বৃদ্ধি হয়নি। ১৪টির দরপতন ও ৭টির লেনদেন হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।
বড় খাতগুলোর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতে ২৮টির লেনদেন হয়েছে দরপতন ও আগের দরে। মাত্র ২টির দর বেড়েছে। প্রকৌশলে ১৬টির দরপতন, ২২টির আগের দরে ও ২টির দরবৃদ্ধি হয়েছে।
ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডেও ২৬, ১৬ ও ২৭টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন করছে। খাতগুলোতে দরপতন ও দরবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৫, ১ ও ২ এবং ২, ১ ও ১টির।
আগের কর্মদিবসের মতোই সবচেয়ে ভালো দিন গেছে বিমা খাতের বিনিয়োগকারীদের। সর্বোচ্চ ১৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেনের সঙ্গে দরবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে। ৩৫টি কোম্পানির দর বেড়ে হাতবদল হয়েছে।বিপরীতে ৫টির দরপতন ও ২টির লেনদেন হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।
লেনদেনের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের শীর্ষ নির্বাহী (সিইও) সুমন দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবরে সাইকোলজিক্যাল একটা ইফেক্ট পড়েছে শেয়ারবাজারে। কারণ, যেসব কোম্পানির প্রোডাকশন গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল তাদের কস্ট অফ প্রোডাকশন বেড়ে যাবে। প্রাইস বাড়বে। সেটা তো একটু অ্যাডজাস্ট করতে হবে। তবে সরকারের সাবসিডি কমে গেলে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।’
শেয়ারবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।