কোনো ব্যাংক নতুন শাখা খুলতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদনের জন্য যে বছরে নতুন শাখা খোলা হবে তার অব্যবহিত পূর্ববর্তী বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
পাশাপাশি ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকার জনসাধারণের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার বাইরে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ উপ-শাখা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ‘ব্যাংকের ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন, ভাড়া ও ইজারা সংক্রান্ত নীতিমালা’ শীর্ষক সার্কুলারে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।
সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা, ঋণের মান, শাখা ব্যবস্থাপনা, আমানতকারীদের সেবা প্রদানসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনাপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সংখ্যক শাখা স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দেবে।
এসএমই ও কৃষি শাখা ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদনপ্রাপ্ত শাখাগুলোর মধ্য হতে প্রয়োজনে যে কোনো শাখাকে এসএমই বা কৃষি শাখা হিসেবে করার পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীর কপিসহ নির্ধারিত ছকে আবেদন করতে হবে। এসব শাখা বিভাগীয় শহর বা সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে করতে হবে এবং ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে এসএমই ও কৃষি শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যতীত অন্য সব ব্যাংকিং কার্যক্রম করা যাবে। এসব শাখায় আমানতের অন্যূন ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট শাখার আওতাধীন এলাকার এসএমই বা কৃষি খাতে ঋণ দিতে হবে।
নতুন নীতিমালায় শহর ও পল্লী শাখার সংজ্ঞায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে সিটি করপোরেশন ও ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত পৌরসভা এলাকায় স্থাপিত বা স্থাপিতব্য শাখা ‘শহর শাখা’ এবং অন্যান্য এলাকায় স্থাপিত বা স্থাপিতব্য শাখা ‘পল্লী শাখা’ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া কোনো এলাকা নতুনভাবে সিটি করপোরেশন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হলে বা বিদ্যমান সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলে কিংবা বিদ্যমান কোনো ‘খ’ বা ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলে তদস্থিত ব্যাংক শাখা শহর শাখা হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে।
উপশাখার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং সুবিধা বঞ্চিত এলাকার জনসাধারণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে মোট উপ-শাখার কমপক্ষে ৬০ শতাংশ সিটি করপোরেশন ও ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত পৌরসভা এলাকার বাইরে স্থাপন করতে হবে। ব্যাংকে নিয়ন্ত্রণকারী শাখা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার দূরত্বে কোনো উপ-শাখা করা যাবে না।
উপ-শাখার স্থাপনার ভাড়া চুক্তির মেয়াদ ন্যূনতম ৩ বছর করতে হবে। এছাড়া নির্ধারিত মেয়াদে ১৫ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়াতে পারবে না।
উপশাখার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ২ জন কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে হবে। উপশাখাতে প্রচলিত শাখায় ব্যাংকিং সেবার জন্য যে নির্ধারিত ফি, চার্জ ও কমিশন সেটাই বহাল থাকবে। তাছাড়া বিদ্যমান নীতিমালার অন্যান্য প্রযোজ্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত রেখে পরিমার্জন করে উপ-শাখা স্থাপনের জন্য একীভূত নির্দেশনা প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইলেক্ট্রনিক বুথ স্থাপনের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটির অনুমোদন থাকতে হবে এবং বুথ স্থাপনের ১৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ছকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। গ্রাহকের ব্যবহারের সুবিধা বিবেচনায় প্রতিটি বুথে একক এটিএম বা সিডিএম স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ বর্গফুট পরিসর এবং একাধিক এটিএম বা সিডিএম স্থাপনের জন্য আনুপাতিক হারে স্পেস ভাড়া গ্রহণ করা যাবে। এছাড়া এসব বুথ স্থাপনের ব্যয় ও ভাড়া সংক্রান্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে শাখার জন্য প্রযোজ্য নিয়ম অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এখন থেকে কোনো ধরনের স্থাপনা ভাড়া নেয়ার সময় অগ্রিম বাবদ ভাড়া চুক্তির মেয়াদ ৪ বছর পর্যন্ত হলে সর্বোচ্চ ১২ মাসের ভাড়া, ৪ বছরের বেশি কিন্তু ৯ বছরের কম হলে সর্বোচ্চ ২৪ মাসের ভাড়া এবং ৯ বছর বা তদূর্ধ্বে হলে সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের ভাড়ার সমপরিমাণ অগ্রিম প্রদান করা যাবে। নির্ধারিত মেয়াদে ন্যূনতম ৩ বছর অন্তর মূল ভাড়ার ১৫ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়াতে পারবে না।
বাজার দর বিবেচনায় প্রতি বর্গফুটের জন্য ব্যয়সীমা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা এবং বিদ্যমান ব্যবসা কেন্দ্র স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের জন্য সর্বোচ্চ এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা যাবে। আইটি সরঞ্জাম ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যয়ও যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে থাকতে হবে। এতদিন এই ব্যয়সীমা ছিল প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৫০ টাকা ও এক হাজার ২৫০ টাকা।