হিসাব নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আহমেদ জাকির অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষা করতে পারবে না।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) বুধবার এই নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনার দিন থেকেই কার্যকর হওয়া এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নতুন কোনো নির্দেশনা জারি না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর আসে, চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নামের একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর।
আর যে চার মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা নয়ছয় করা হয়েছে সেই ফান্ডগুলোর নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ছিল আহমেদ জাকির অ্যান্ড কোম্পানি।
বিষয়টি তদন্তে নামে বিএসইসি। তদন্তের সময় ডেকে পাঠানো হয় হিসাব নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটিকে।
কিন্তু আহমেদ জাকির সে সময় তদন্ত কমিটির কাছে যায়নি, কোনো সহযোগিতাও করেনি। প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত কমিটির সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিষয়টি দেশের পুঁজিবাজারের সব ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান, ইস্যুয়ার ও সম্পদ ব্যবস্থাপককে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
হিসাব নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে কোম্পানির আর্থিক তথ্যের সঠিকতার নিশ্চয়তা দেয়া। কোম্পানি ঠিকমতো কর দিচ্ছে কিনা, ব্যবসাটি চলমান থাকবে কিনা সেগুলো দেখাও হিসাব নিরীক্ষকের কাজ।
বর্তমানে বিএসইসি’র তালিকাভুক্ত হিসাব নিরীক্ষকরাই তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষা করতে পারে।
সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নিবন্ধন পায় ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর। তারা বর্তমানে ৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। আরও দুটি ফান্ড অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বিএসইসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে অর্থ পাচার করছে। এ ক্ষেত্রে ৪টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে। আবার তদন্তকালীন পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আরও অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তারা। শেয়ার বিক্রির এই তথ্য যোগ হলে আত্মসাৎ করা অর্থের অঙ্ক আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে কমিশন ধারণা করছে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র।
ইউএফএস যে ৫টি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে সেগুলোর তহবিলের আকার ৪৪০ কোটি টাকা। এই ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান হিসাবে রয়েছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি)।
বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা লুটে নেয়ার তথ্য মিলেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি বছর ইউএফএস তাদের যে রিপোর্ট দিয়েছে তার অধিকাংশই ভুয়া। এর মধ্যে তহবিল থেকে সরাসরি নগদ নেয়া হয়েছে ১২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই টাকার সুদ আয় দেখানো হয়েছে ৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ব্যবস্থাপনা ফির নামে অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখ এবং ট্রাস্টি ফি বাবদ অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।