ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়েছে। ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মঙ্গলবার দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।
চিঠিতে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনসহ ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ও টিআইএন নম্বরও (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেডের ঠিকানা দেয়া হয়েছে প্যারামাউন্ট হাইটস, লেভেল-১১, ৬৫/২/১, বক্স কালভার্ট রোড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।
এছাড়া ইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমানের ঠিকানা দেয়া আছে- এপার্টমেন্ট-৩০১, বাড়ি-১৬, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা। সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে- এপার্টমেন্ট-ডি ৫, বাড়ি-৩২, রোড-৫, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ইউএফএস-এর এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর ও মাহিদ হকের ঠিকানা দেয়া হয়েছে- এপার্টমেন্ট-১০৩, বাড়ি ১৮, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা।
চিঠিতে নাম থাকা তারেক মাসুদ খানের ঠিকানা- বাড়ি-৩০১, রোড-১৯/বি, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা; মোহাম্মাদ জাকির হোসেনের ঠিকানা- ৫৩৫, পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা এবং মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানার ঠিকানা- বাড়ি-১৩, রোড-১, ব্লক-আই, বনানী, ঢাকা।
অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার তালিকায় আরও রয়েছে- ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।
রোববার গণমাধ্যমে খবর আসে যে চার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস নামের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে আছেন।
এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অন্ধকারে রাখা হয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রহস্যজনক কারণে চার বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। পাশাপাশি অডিট কোম্পানিও ভুয়া রিপোর্টকে বৈধতা দিয়েছে। বিএসইসির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এসব তথ্য।’
অভিযোগ ওঠায় নিজেদের গাফিলতি ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে চার ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান আইসিবি।
ইউএফএস এমডির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে সোমবার জানতে চায় হাইকোর্ট। পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসি ও আইসিবি-কে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।