পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গঠন করা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্টে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন বা ইউএফএস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর এই অর্থ নিয়ে দুবাই চলে যাওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ জানানোর আদেশ এলো।
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি ও আইসিবিকে।
একই সঙ্গে এ ঘটনায় সৈয়দ আলমগীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি হয়েছে।
ইউএফএসের মোট সাতটি বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে। এর মধ্যে পাঁচটির কার্যক্রম চলছে। এগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। বাকি দুটি ফান্ড গঠন প্রক্রিয়াধীন।
চলমান পাঁচ ফান্ডের আকার মোট ৪৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ইউএফএস আইবিবিএল শরিয়া ইউনিট ফান্ড, ১০০ কোটি টাকার ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড, ৮০ কোটি টাকার ইউএফএস পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড এবং ৫০ কোটি টাকার ইউএফএস পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান হলো রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি।
১০ কোটি টাকার প্রগতি লাইফ ইউনিট ফান্ডের ট্রাস্টি হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বিজিআইসি এবং এর কাস্টডিয়ান হলো ব্র্যাক ব্যাংক।
১০ কোটি টাকার ইউএসএফ সানলাইফ ইউনিট এবং ১০ কোটি টাকার ইউএসএফ ইউনিট ফান্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
এই ফান্ডগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০ টাকা করে প্রতি ইউনিট বিক্রি করে টাকা তুলে সেই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। প্রতি বছর মুনাফার ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ ইউনিটধারীদের মধ্যে বিতরণ করে। প্রতি সপ্তাহে সেসব বিনিয়োগের বিপরীতে সম্পদমূল্য কত দাঁড়ালো, সেগুলো প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আছে। কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করেছে, সেসবও প্রকাশ করে অনেকগুলো।
এর মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাত করে কোম্পানির এমডির দুবাই পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় একটি জাতীয় দৈনিকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি এখন বর্তমানে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। আর এই তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া তিনিসহ একটি চক্র শুরু করে ২০১৮ সালেই।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকের প্রতিবেদনে জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিড রেট) দেখিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অন্ধকারে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে আইসিবির ভূমিকাও রহস্যজনক। তারা চার বছর ধরেই ছিল নিষ্ক্রিয়।
অডিট কোম্পানিও ভুয়া রিপোর্টকে বৈধতা দিয়েছে। বিএসইসির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য।
এরপর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এই ঘটনায় আইসিবির কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসনে নিউজবাংলাকে জানান, তিনিও একটি কমিটি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো এগুলো ছাড়াও ৩০টি থেকে ৩৫টি ফান্ডের ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছি। এটা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি তদন্ত করছে। যেহেতু পত্রিকায় চলে এসেছে আমরা ভেবে দেখলাম আমাদেরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’