বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘১৪১ কোটির’ রাজস্ব ভবনে ব্যয় ৪১২ কোটি টাকা

  •    
  • ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:৪৫

২০০৮ সালে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয় একনেকে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তির পর ২০১৪ সালে প্লট বুঝে পায় এনবিআর। পরে নকশা পরিবর্তন করে বাড়ানো হয় প্রকল্পের পরিসর। খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪১২ কোটি টাকা।

নিজস্ব ভবনে অফিস করার ৩০ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে রাজস্ব কর্মকর্তাদের। নতুন বছরে নতুন ভবন পাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন এই রাজস্ব ভবনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৬০ ফুট সড়কের মোড়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে ভবনটি। অবশ্য ২০০৮ সালে ভবন নির্মাণের জন্য ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করেছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক।

ভবনটি নির্মাণে জমি বরাদ্দ দেয়া হয় ১৯৯২ সালে। পরে মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কারণে বার বার পিছিয়েছে কাজ। এক পর্যায়ে ভবনটি আদৌ হবে কীনা এমন অনিশ্চয়তাও দেখা দেয়। যাহোক, জমি নিয়ে জটিলতার অবসান হলে সাত বছর পর ২০১৫ সালে কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রকল্প প্রাক্কলনের তিন গুণ।

১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ৭৬ নম্বর অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআরের জন্ম। ৫০ বছরে সংস্থাটির রাজস্ব আহরণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার গুণ। যে সংস্থাটি জাতীয় বাজেটের ৮৫ শতাংশ অর্থ জোগান দেয়, এতদিন সেই প্রতিষ্ঠানেরই কোনো নিজস্ব ভবন ছিল না।

সেগুনবাগিচায় এনবিআরের বর্তমান ভবনটি অনেক পুরনো। পাকিস্তান আমলে এখানে ছিল সচিবালয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এখানে কিছুদিন কাজ চলে সচিবালয়ের। এরপর সচিবালয় চলে যায় বর্তমান ঠিকানায়। আর সেগুনবাগিচার ওই ভবনে যায় এনবিআর।

এনবিআরের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা রাজস্ব ভবনে বসেন। এর বাইরে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ভাড়া ভবনে অফিস করেন। নতুন ভবনে চেয়ারম্যান, সদস্যসহ মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকটি অফিস স্থানান্তর করা হচ্ছে।

কর কমিশনার ও রাজস্ব ভবন প্রকল্প পরিচালক লুৎফুল আজীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে নতুন ভবনে প্রয়োজনীয় সব অফিসের স্থানান্তর কাজ শেষ হবে। এখানে এনবিআরের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ এক হাজার ৭৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা রয়েছে।’

এনবিআরের অধীনে সারা দেশে ছয় শতাধিক আয়কর (সার্কেল) অফিস এবং তিন শতাধিক ভ্যাট অফিস রয়েছে। এর বাইরে আছে কর অঞ্চল, কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন। ভবন ভাড়া নিয়ে এসব অফিস চালায় এনবিআর।

নতুন ভবনে যা থাকছে

কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবনটির সামনে রয়েছে সুপরিসর রাস্তা। রাস্তা পেরোলেই নজরে পড়বে দৃষ্টিনন্দন ভবন। নিরাপত্তা ফটক পেরোলেই চোখে পড়বে চলন্ত সিঁড়ি। ভবনের প্রবেশপথেই চোখ আটকে যাবে আগন্তুক আর সেবা প্রার্থীদের।

নতুন ভবনটি ২০ তলাবিশিষ্ট করার কথা থাকলেও নানা দিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত ১২ তলাবিশিষ্ট করা হয়। এই ভবনে রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও দুটি আপিল ও ট্রাইবুন্যাল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), দুটি লার্জ ট্যাক্স পেয়ার ইউনিটের অফিস স্থানান্তর করা হচ্ছে।

পেছনের কথা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৯২ সালে কর বিভাগের অনুকূলে দুই একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় সেখানে কাজ শুরু করতে পারেনি এনবিআর।

২০০১ সালে বর্তমান জায়গায় দুই একরের প্লট বরাদ্দ পায় এনবিআর। সেখানেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। ২০০২ সালে জমি বরাদ্দ পেলেও বুঝে পেতে বিলম্ব হয় ছয় বছর। তবে জমি বুঝে না পেলেও ওই বছরই প্রথবারের মতো ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান।

ভিত্তি স্থাপনের ছয় বছর পর ২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয় একনেকে। জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হলে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর।

এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হয়ে যায়। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। বিশেষ করে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে পরিসর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়। ব্যয় হয় ৪১২ কোটি টাকা। বাকি ৩৯ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দেয়া হয়।

প্রথমে ১২ তলা ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ পায় আলোচিত ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির হোতা জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা মূল ভবনের কাঠামো তৈরি করে। জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর কাজ বন্ধ থাকে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য তাহের ব্রাদার্স অ্যান্ড হোসেন কনস্ট্রাকশন জেভিকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়।

যে কারণে বিলম্ব

প্রকল্পের শুরুতে ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল। পরে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন ছাড়াই ৩০ তলা ভিত্তির ওপর ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। শুরু হয় আরেক বিপত্তি। এরপর তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০১৫ সালে এনবিআরের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ২০ তলার বদলে ৪০ তলা ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করে।

ওই সভায় সর্বসম্মতভাবে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। অদূর ভবিষ্যতে শেরেবাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় বেবিচকের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে- এমন চিন্তা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তা নেয়নি এনবিআর। এ নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে বিভেদ দেখা দেয়। সবশেষ ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় এনবিআর ভবনের সংশোধিত ব্যয় অনুমোদন করা হয়। অনুমোদিত ব্যয় ১৪১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫১ কোটি টাকা করা হয়।

প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০ তলা না করে ১২ তলা ভবন করতে হবে। কেননা ভবনটির অবস্থান বিমানবন্দরের কাছাকাছি।

এ বিভাগের আরো খবর