১৬৯টি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার এক সপ্তাহ পর পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো লেনদেন তিন শ কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে টানা দুই দিন বেড়েছে সূচক।
এই সিদ্ধান্ত আসার পর প্রথম চারটি কর্মদিবসে এক দিন দুই শ কোটি টাকার নিচে এবং তিন দিন দুই শ কোটির ঘরে লেনদেন হয়েছে। এতে ফ্লোর আংশিক তোলার সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ‘বুমেরাং’ হয়েছে কি না, শুরু হয় আলোচনা।
তবে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন প্রথমবারের মতো ছাড়াল তিন শ কোটি টাকার ঘর। আগের দিন ১৫ পয়েন্টের পর এদিন সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
অবশ্য সূচক বাড়লেও দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তুলনায় দর হারিয়েছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা বেশি। ৬০টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০৭টির। ১৮৭টি কোম্পানি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে।
৩টি কোম্পানির লেনদেন রেকর্ড ডেটের কারণে বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩৫টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
ডিএসইতে এদিন হাতবদল হয় ৩৪৫ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৭ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বেশি। বুধবার লেনদেন ছিল ২৫৮ কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার।
আজকের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল সাত কর্মদিবস আগে ১৯ ডিসেম্বর। ওই দিন হাতবদল হয় ৪৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা।
ফ্লোর ওঠা কোম্পানির লেনদেন কেমন
গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর মাস তিনেক পুঁজিবাজারে চাঙাভাব থাকলেও অক্টোবরের শেষ থেকে আবার দেখা দেয় মন্দাভাব। ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর আর কমতে পারবে না, এই অবস্থানে আসার পর সেই দরে শেয়ার কিনতে আগ্রহী ছিল না বিনিয়োগকারীরা।
এই অবস্থায় ২২ ডিসেম্বর থেকে ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
তবে এসব কোম্পানি বাছাইপ্রক্রিয়ায় যে গলদ ছিল, তা বোঝা যায় এর পরেই। প্রথমত এমন একটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তোলা হয়েছে, যেটির লেনদেন স্থগিত।
আবার বেশ কিছু কোম্পানির দর ফ্লোরের চেয়ে অনেক বেশি। কোনোদিন এর দর বাড়তি ৫ থেকে ৮ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি। কোনো দিন কমত এ রকম। কিন্তু এখন সেসব কোম্পানির দর কমতে পারছে না। ফলে ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিএসইসির আশা ছিল, ফ্লোর প্রাইস ওঠার পর এসব কোম্পানির লেনদেন বাড়বে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তা কমিয়ে দেয় আরও।
বৃহম্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বৃহস্পতিবার সে চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। আগের দিনের তুলনায় ডিএসইতে শেয়ার লেনদেন বেড়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৪৮৬টি। আজ ডিএসইর মোট ভলিউম দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৬টি, যা গতকাল ছিল ৩ কোটি ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৪০টি।
ক্রেতা না থাকা কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া বেশ কিছু কোম্পানির প্রায় ১ শতাংশ দর কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ।
শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় সুন্দরবন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০টি। এর বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল আগে ১০ নভেম্বর, ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪৭টি।
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের ৬৩ হাজার ৯০৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা ১৪ ডিসেম্বরের থেকে এই আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি ১ লাখ ৪২ হাজার ৪০২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল সেদিন।
দুই দিনে আগের চেয়ে আড়াই লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকসের। হাতবদল হয় ৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৯০টি শেয়ার, যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার টাকা।
শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ দর কমে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৩টি। এর চেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ১৭ নভেম্বর ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৯টি।
আজিজ পাইপসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ হাজার ৩৮৮টি, যার বাজার দর ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
মুন্নু অ্যাগ্রোর শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ৫১ হাজার ৯০৯টি, যার আর্থিক মূল্যমান ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪০টি। শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ দর কমে স্টাইল ক্রাফটের ১১ হাজার ৩৪০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪১টি।
এ ছাড়া বিডি অটোকারস, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, হা-ওয়েল টেক্সটাইল, বিডি থাইসহ আরও বেশি কিছু কোম্পানির শেয়ার লেনদেন আগের চেয়ে বেড়েছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের সাবেক সিইও সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকদিন পতনের পরে আজকে কিছুটা বাই ছিল, যার কারণে সূচক ও ট্রানজেকশন বেড়েছে।’
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ দর বেড়ে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮ টাকা ১০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ২৫ টাকা ৬০ পয়সা।
৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ দর বেড়ে আমরা নেটওয়ার্কসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১ টাকা ৪০ পয়সায়, যা আগের দিন ছিল ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা।
তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন। ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৫২৭ টাকা ৪০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৪৮৫ টাকা।
এ ছাড়া তালিকায় ছিল কোহিনূর কেমিক্যাল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, নাভানা ফার্মা, অগ্নি সিস্টেমস, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, অ্যারামিট লিমিটেড ও চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ দর কমেছে মুন্নু সিরামিকসের। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২২ টাকা ৭০ পয়সায়।
১ শতাংশ দর কমে নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৯ টাকা ৬০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৪০ টাকা।
সিএমপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১ এর দর ১ শতাংশ কমে প্রতি ইউনিট লেনদেন হয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়। আগের দিন ছিল ১০ টাকা।
এ ছাড়া তালিকায় পরের স্থানে ছিল ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, রেনউইক যজ্ঞেশর, রহিম টেক্সটাইল, লিবরা ইনফিউশন, প্রাইম টেক্সটাইল, বিচ হ্যাচারি ও সাভার রিফ্যাক্টরিজ।
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৫২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক। এদিন বন্ডের ইউনিট প্রতি দর বেড়েছে ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ।
কোহিনূর কেমিক্যালের দর ৮ দশমিক ২১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট।
ওরিয়ন ইনফিউশন সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এর বাইরে সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে বার্জার পেইন্টস, নাভানা ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেনেক্স ইনফোসিস, ইউনিক হোটেল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ও আমরা নেটওয়ার্কস।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯২ পয়েন্ট।
বিপরীতে কোনো কোম্পানিই ১ পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি। সূচক কমিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা, মুন্নু সিরামিকস, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, রহিম টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস, রেনউইক যজ্ঞেশর, সায়হাম টেক্সটাইল, মুন্নু অ্যাগ্রো, ডমিনেজ স্টিল ও ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে শূন্য দশমিক ৫৩ পয়েন্ট।