অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৎপরতায় শেয়ারবাজার অনেকটা গতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেছেন ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।
সোমবার ডিএসইর মাল্টিপারপাস হলে প্রতিষ্ঠানটির ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি এমনটা দাবি করেছেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সরকারের দূরদর্শিতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারা তুলনামূলকভাবে অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বিএসইসি ও ডিএসইর বহুমুখী কর্মতৎপরতায় দেশের শেয়ারবাজারও অনেকটা গতিশীল হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস বাজারে গতিশীল অবস্থা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনার মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার প্রত্যাশা করছিল, তখনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেই গতি মন্থর করে দেয়৷ ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয় বিশ্বের শেয়ারবাজারে৷ দেশের শেয়ারবাজারও এ অবস্থা থেকে বাদ পড়েনি৷’
ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে৷ বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়৷’
ডিএসইর অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিচালনা পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই ত্রুটিবিহীন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে ডিএসইর ভাবমূর্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শেয়ারবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য লেনদেন ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ওপর ব্যাপক কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে।
‘বাজারের গতিকে ধরে রাখতে ডিএসই বিভিন্ন গ্রুপ অফ কোম্পানিজ, টেক স্টার্টআপ এবং গ্রোথ স্টেজ কোম্পানিকে বাজারে আনার মাধ্যমে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নেও কাজ করছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো ইসলামি সুকুক বন্ড তালিকাভুক্তির মাধ্যমে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে।’
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বহুল প্রতীক্ষিত সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হয়েছে। শিগগির শেয়ারবাজারে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) লেনদেন শুরু হবে। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’
ওএমএস সিস্টেম, এপিআই ইউএটি সংযোগ ও আধুনিক ডেটা সেন্টার তৈরির কথা জানিয়ে ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়্যার স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যায়, প্রয়োজনীয় সফট্ওয়্যার সংযোজনের পর শিগগির ডাটা সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।’
এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৩০ জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরের কোম্পানির পরিচালকদের প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী বিবেচনা করে অনুমোদন দেয়া হয়।
এ ছাড়াও পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশকৃত ৬ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন, পরবর্তী অর্থবছরের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাদের পারিতোষিক নির্ধারণ করা হয়।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের ২টি শূন্য পদে নির্বাচনে মোহাম্মদ শাহজাহান ও শাকিল রিজভীকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ এ হাফিজ। ফলে সভায় তারা পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত হন।
সভায় প্রাইলিংক সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান ডা. জহিরুল ইসলাম, আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দীন, আলী সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান এম আকবর আলী, গ্রীনল্যান্ড ইক্যুইটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাজিব আহসান, শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজেদুল ইসলাম, রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, গ্লোবাল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও, পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আহসান উল্ল্যাহ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও মুহাম্মদ কাউছার আল মামুন এবং এ্যাংকর সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড এম নাজিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।
পরে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার ইক্যুইটি মার্কেটের উন্নয়ন, এসএমই মার্কেট, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), ইটিএফ বাস্তবায়ন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন-সরকারি সিকিউরিটিজ মার্কেট, কর্পোরেট বন্ড মার্কেটসহ শেয়ারহোল্ডারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন৷