করোনা মহামারির সময় দেশে গাড়ি আমদানি তলানিতে পৌঁছায়। করোনা নিয়ন্ত্রণে এলে এ ব্যবসা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও এখন আবার আগের চেহারায় ফিরে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়ি আমদানি ব্যাপক কমে গেছে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের পর থেকে রিকন্ডিশন্ড (পুরাতন) এবং নতুন গাড়ি আমদানি নেই বললেই চলে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকার গাড়ি আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছে। ব্যাংকগুলো এ ব্যবসায় এলসি বা ঋণপত্র খুলতে চায় না। এর প্রধান কারণ ডলার সংকট।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে শোরুম খুলে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। এসব শোরুমে যেসব গাড়ি শোভা পাচ্ছে, সেগুলো আগের চালানে আনা। নতুন করে গাড়ি আমদানি প্রায় বন্ধ। বেচাকেনা নেই। হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন গাড়ি ব্যবসায়ীরা।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান খসরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা প্রায় বন্ধ রেখেছে। প্রতি ১০০ জনে চার-পাঁচজন চেষ্টা-তদবির করে ঋণপত্র খুলতে পারছেন। তা-ও ৫০ হাজার ডলারের বেশি নয়। এতে আমদানির পরিমাণ ভয়াবহ রকম কমে গেছে।’
রাজধানীর কাকরাইলে গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘অটো কারস’ দুই মাস ধরে চেষ্টা করেও ঋণপত্র খুলতে পারেনি। ওই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার আবুল হাসেম বলেন, ‘দেশে গাড়ি আমদানিকারকদের অনেকেই ঋণপত্র খোলা ও গাড়ি আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। দুই-তিনটি গাড়ি আসছে। এমনও হচ্ছে, চুক্তি অনুসারে সরবরাহকারী গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু সঠিক সময়ে ডলার পরিশোধ করা যাচ্ছে না। চার-পাঁচ মাস ধরে এমন অবস্থা চলছে। এ ছাড়া দুই মাস ধরে ব্যাংকগুলো নতুন কোনো ঋণপত্র খুলছে না। এতে গাড়ি আমদানি প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’
বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, ‘যারা এক-দেড় মাস আগে প্রোফর্মা চালান (পিআই) জমা দিয়েছিল, তাদের ঋণপত্র খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নতুন ঋণপত্রের বিষয়ে ব্যাংকগুলো নিজেরাই নিরুৎসাহিত করছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো ডলার সংকটকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে।’
ডলার-সংকট মোকাবিলায় গত জুলাই মাসে গাড়িসহ বেশ কিছু বিলাসপণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানো হয়। এর পর থকে কার্যত দেশে গাড়ি আমদানি তলানিতে।
তারপরও ব্যবসায়ীরা শতভাগ মার্জিন দিয়ে গাড়ি আনার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন টাকা জোগাড় করেও ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না।
বারভিডা সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ৫ মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০টি নতুন গাড়ি ও সাড়ে ১২ হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এসেছে। আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বড় একটি অংশ আসে মোংলা সমুদ্রবন্দর হয়ে। এই বন্দর দিয়ে গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে ৮ হাজার ৮২৪টি গাড়ি এসেছে। এর অধিকাংশই রিকন্ডিশনড। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জুলাই-নভেম্বর সময়ে মোট ৬ হাজার গাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৭৭টি নতুন ও ৩ হাজার ৮২৩টি রিকন্ডিশনড গাড়ি।
মাসভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, কয়েক মাস ধরে আমদানি কমছে। সবচেয়ে কম গাড়ি আমদানি হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। যেখানে প্রতি মাসে ৩ হাজারের বেশি গাড়ি আসে, সেখানে সেপ্টেম্বরে আসে মাত্র ১ হাজারটি। অক্টোবরে এই সংখ্যা আরও কমে গেছে।
দেশে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড— দুই ধরনের গাড়িই আমদানি ও বিক্রি হয়। জাপানে এক থেকে পাঁচ বছর ব্যবহৃত হওয়ার পর ‘রিকন্ডিশন্ড’ নামে গাড়ি আমদানি হয়। দেশে গাড়ির বাজারের ৮০ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দখলে।
আমদানি কমার পাশাপাশি দেশের বাজারে গাড়ির দাম বেড়েছে। গত তিন-চার মাসে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে গাড়ি ভেদে দাম ৫ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, শীত মৌসুমে দেশে বিয়েসহ বিভিন্ন উপলক্ষ থাকে। এ কারণে গাড়ি বিক্রি বাড়ে। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গাড়ির আমদানি খরচ বেড়েছে। এতে দেশের বাজারে গাড়ির দাম বাড়ছে।
সাধারণত জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বেশি আমদানি হয়। টয়োটার এলিয়ন, প্রিমিও, ফিল্ডার মডেলের গাড়িই বেশি আসে। এ ছাড়া হন্ডাসহ বিভিন্ন কোম্পানির এসইউভি মডেলের গাড়িও আমদানি হয়।