পরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১০৩ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা জোরদার করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে সহায়তার জন্য এই ঋণ দেবে উন্নয়নন সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বিইএসটি) প্রকল্প পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক সক্ষমতা জোরদার করতে সহায়তা করবে। একইসঙ্গে প্রকল্পটি দূষণ রোধ ও পরিবেশগত গুণমান উন্নত করতে পরিবেশগত প্রবিধান ও এর প্রয়োগিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করবে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে আর্থিক খাতকে উৎসাহিত করার জন্য একটি গ্রিন ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমও প্রতিষ্ঠা করা হবে এর আওতায়।
প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৃহত্তর ঢাকা এবং এর বাইরে বসবাসকারী ২ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যানড্যান চেন বলেন, 'পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার। এই প্রকল্পটি দেশের পরিবেশ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ভালোভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী করে তুলবে।'
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। পাশাপাশি নগরায়ণের ফলে দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। দূষণ শুধু যে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে তা নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ক্ষমতাও নষ্ট করছে। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার। এই প্রকল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের পরিবেশ সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করবে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বার্ষিক প্রায় ৪৬ হাজার যানবাহন পরিদর্শনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে চারটি যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করবে। বার্ষিক সাড়ে তিন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য এক মিলিয়ন টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সহায়তা করা।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং টাস্ক টিমের নেতা জিয়াং রু বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরা নিয়মিত ঢাকার উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণের প্রতিবেদন দেখি। বিশ্বব্যাংকের অনুমান দেখায় যে, ২০১৯ সালে বায়ু দূষণ এবং সীসার এক্সপোজার বাংলাদেশে মৃত্যুর এক-পঞ্চমাংশেরও বেশির জন্য দায়ি, যা দেশের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ ব্যয় করে।’
‘পরিবেশগত বিধিবিধান এবং কঠোর পরিবেশগত প্রয়োগ বেসরকারি খাতকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং সবুজ বাড়াতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে প্রকল্পটি। দেশকে ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য নির্গমনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশকে এই ঋণ বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে দেওয়া হবে। যা পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে; শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।