পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজিতে ফের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুর স্বজন ও সহযোগীদের নাম এলো। এবার তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, তার পারিবারিক কোম্পানি ও দুই সহযোগীকে জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিমা খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বা বিএনআইসিএলের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে এই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তাদের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা।
তবে হিরু দাবি করেছেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না। আর বিএসইসি থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি, যদিও জরিমানার সিদ্ধান্তের নথি পেয়েছে নিউজবাংলা।
এবার সব মিলিয়ে জরিমানা করা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যার মধ্যে হিরুর স্ত্রীকে একাই দিতে হবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাকিদের মধ্যে হিরুর পারিবারিক কোম্পানি ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৩৫ লাখ, সহযোগী এ জি মাহমুদকে ৫০ লাখ ও তার ভাই সাইফ উল্লাহকে দিতে হবে ১৫ লাখ টাকা।
এর আগেও এই চক্রটিকে ১২ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছিল। নতুন এই সিদ্ধান্তে সেই বেড়ে হবে ১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হলো, যদিও তারা কারসাজি করে শত কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
বিএসইসির জরিমানার অঙ্ক কম বলে সমালোচনাও আছে। এমন কথাও বলা হয়, কারসাজি করে প্রায় দুই শত কোটি টাকা আয় করে কারও ১৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যত কারসাজিকে উৎসাহই দেবে।
বিএসইসির পক্ষ থেকে একাধিকবার এই প্রশ্নে বলা হয়েছে, আইনের বাইরে গিয়ে তাদের জরিমানার সুযোগ নেই। আইনে যে জরিমানার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তার সর্বোচ্চটাই করা হয়েছে।
এর আগে এই চক্রটি এশিয়ান ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, এনআরবিসি ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বিডিকম, ওয়ান ব্যাংক, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স ও আইপিডিসির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এসব শেয়ারে কারসাজি করে চক্রটি ১৮৭ কোটি টাকা আয় করেছিল বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে। বিএনআইসিলের শেয়ারে কারসাজি করে কত টাকা তারা আয় করেছে, সেই বিষয়টি এখনও জানা যায়নি।
কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয় সাড়ে তিন গুণ
বিএসিইসির তদন্তে দেখা যায় ২০২১ সালে যখন পুঁজিবাজার চাঙা ছিল, সে সময় বিএনআইসিএলের শেয়ারদর সাত মাসে বেড়ে সাড়ে তিন গুণ হয়ে যায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৪৬ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ১ এপ্রিল দর দাঁড়ায় ৭৪ টাকা।
দেড় মাসের মধ্যে এখান থেকে দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায় শেয়ারদর। ১৬ মে দর দাঁড়ায় ১৪৯ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর কিছুটা কমে ১২ আগস্ট তা নেমে আসে ১১৬ টাকা ৫০ পয়সা। সেখান থেকে আরেক ধাপ বেড়ে ২৭ সেপ্টেম্বর দর দাঁড়ায় ১৬৩ টাকা ৮০ পয়সা।
এরপর দিন থেকেই শেয়ারের দর কমতে থাকে। আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সবশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা।
দর বাড়ার সময় গুজব ছড়ায় যে, বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর আয় ব্যাপকভাবে বাড়বে। তবে পরে দেখা যায়, এর কিছুই সত্য হয়নি।
২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৩২ পয়সা আয় করে। পরের বছর কিছুটা বেড়ে আয় দাঁড়ায় ৩ টাকা ২৩ পয়সা। আর লভ্যাংশ শেয়ার প্রতি দেড় টাকা থেকে বেড়ে হয় ১ টাকা ৮০ পয়সা।
হিরু বলছেন জানেন না
এর আগে ১২ কোটি টাকা জরিমানার বিষয়টি হিরু নিশ্চিত করেছেন নিউজবাংলাকে। তবে তার স্বজন ও সহযোগীদেরকে নতুন করে জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন।
নিউজবাংলার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আবার জরিমানা করেছে? না, আমি সেটা জানি না।’
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা তো কমিশনের বৈঠকের গোপন সিদ্ধান্ত। এখনও আমাদের জানানো হয়নি। জানালে পরে বলতে পারব।’