বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ও মোট দেশজ উৎপদান (জিডিপি) গণনার হিসাব পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি সূচকে সংস্কার চেয়েছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক ঋণদানকারি এই সংস্থাটি।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এ সময় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিয়ার রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।
সরকারের সঙ্গে সিরিজ আলোচনার অংশ হিসেবে বিবিএসের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
এর আগে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে তারা। এসব বৈঠকে দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে কিছু শর্ত নিয়েও আলোচনা করা হয়।
ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে গত ২৬ অক্টোবর আইএমএফের ১০ সদস্যের স্টাফ মিশন ঢাকায় এসেছে। সংস্থার এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনান্দ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবে আইএমএফ।
বর্তমানে বাংলাদেশ বছরে একবার জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে। আইএমএফ এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংস্থাটি মনে করে, ভারতসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই তিন মাস অন্তর (কোয়ার্টারলি) জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে। বিশ্বের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশকে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে তারা।
যোগাযোগ করা হলে বিবিএসের ডিজি মতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। আগামী অর্থবছর থেকে তা প্রকাশ করা হবে। আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা ছিল আইএমএফ টিমের সঙ্গে রুটিন বৈঠক। রাহুল আনন্দ এখানে আগেও এসেছিলেন। আবার এসে দেখা করে গেছেন।’
মতিয়ার রহমান আরও বলেন ‘আমরা বাৎসরিক জিডিপির হিসাব করি। তারা আমাদের এখানে নতুন একটি বিষয় চালু করতে চাচ্ছে। সেটা হচ্ছে প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপি হিসাব করা। সেটাই আমরা করছি এখন।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি গণনার হিসাব নিয়েও কথা বলেছে আইএমএফ। সরকার এখন ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে থাকে। আইএমএফ ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করার তাগিদ দিয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশ করতে বিলম্ব করে সরকার। এই তথ্য কেন প্রকাশে দেরি হলো, তা জানতে চায় আইএমএফ।
জবাবে বিবিএসের কর্মকর্তারা বলেছে, মাঠ পর্যায়ে তথ্য সরবরাহ করতে দেরি হওয়ায় সময়মত প্রকাশ করা যায়নি। তবে এখন থেকে নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিবিএসের ডিজি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে আগস্টের মূল্যস্ফীতির রিপোর্ট জমা দিয়েছি। সরকার অনুমোদন দিলে প্রকাশ করি। আগস্টে সরকারের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়া যথাসময় প্রকাশ করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তো মন্ত্রণালয়ে কাজ করি না। মন্ত্রী-সচিব এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। তবে এখন থেকে প্রতি মাসে সময় মতো প্রকাশ করা হবে।’
বৈঠকে আইএমএফ বলেছে, বিশ্বের সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এটি মোকাবিলা করাই এখন চ্যালঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে সংস্থাটি।
জবাবে বিবিএসের কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে নীতি সুদ হার বাড়োনোসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ঋণের সুদ হার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এসব পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানান তিনি।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হিসাব মিলছে না। সরকার যে পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির হিসাব দিচ্ছে, তাতে ত্রুটি রয়েছে। এটির পরিবর্তন দরকার।