বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাপ কমবে আইএমএফের ঋণে

  •    
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:২১

অর্থনীতি নিয়ে দুই বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ঋণের প্রথম কিস্তি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যায়, তাহলে ২০২৩ সালটা স্বস্তির মধ্যে শুরু করতে পারবে সরকার। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যেভাবে কমছে, তা আর কমবে না। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে যে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়া গেলে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দেয়া যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতির দুই গবেষক আহসান এইচ মনসুর ও মঞ্জুর হোসেন।

তারা বলছেন, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ঋণের প্রথম কিস্তি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যায়, তাহলে ২০২৩ সালটা স্বস্তির মধ্যে শুরু করতে পারবে সরকার। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যেভাবে কমছে, তা আর কমবে না। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে যে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

এই পরিস্থিতিতে কিছু শর্ত মেনে হলেও আইএমএফের ঋণ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।

এদিকে ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফের প্রতিনিধিদল বুধবার ঢাকায় আসছে বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থাটি। অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। সফরকারী দলটি ২৬ অক্টোবর বুধবার থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন ঢাকায় অবস্থানকালে বাংলাদেশের জন্য আগামীর ঋণ কর্মসূচি এবং নতুন করে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ও নীতি নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ঢাকায় আইএমএফ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দ এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছরে করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। প্রধান সূচকগুলো নেতিবাচক দিকে যাচ্ছে। সাত মাস পর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গত সেপ্টেম্বরে। চলতি অক্টোবর মাসেও রেমিট্যান্সপ্রবাহ কম। ১৩ মাস পর রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে লেগেছে হোঁচট। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এই দুই সূচকে নেতিবাচক ধারার কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। টানা দুই মাস মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর।’

‘এই পরিস্থিতিতে আইএমএফের অর্থনীতির চাপ সামাল দিতে আইএমএফের ঋণটা খুবই জরুরি’ মন্তব্য করে আহসান মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনো ব্যতিক্রম দেশ নয়। সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। এর মধ্যে কিছু দেশ কম খারাপ। আর কিছু দেশ বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। কেউ স্বস্তিতে নেই। কাউকে দোষারোপ করব না। নিজের ঘর গোছাতে হবে। অন্যের ঘর দেখে লাভ নেই। বিশেষ করে এই আপৎকালীন আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আর এই কাজের একটি হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব আইএমএফের ঋণটা আমাদের পেতেই হবে। এজন্য যদি সংস্থাটির কিছু শর্ত মানতে হয়, সেটা মেনেই ঋণটা নিতে হবে।

‘এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আইএমএফের মূল কাজ হচ্ছে ক্রাইসিস ঠেকানো। আইএমএফের ঋণ একটি আস্থার সৃষ্টি করে। এই সময়ে আইএমএফ আমাদের ঋণটা যদি দিয়ে দেয়, তাহলে বিশ্বব্যাংক তখন পাশে থাকবে। তারাও ঋণ দেবে। এডিবি এগিয়ে আসবে। জাইকা আসবে। সবাই এগিয়ে আসবে। তখন তারা সবাই তাদের সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। আমাদের শুধু ব্যালান্স অব পেমেন্ট আর বাজেট সাপোর্টটি নিতে হবে। যাতে সরকার ব্যালান্স অব পেমেন্টে আর বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে কোনো ক্রাইসিস ছাড়া।’

তিনি বলেন, ‘একটি দিক দিয়ে কিন্তু আমরা এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছি। দেশে কিন্তু খাদ্যের কোনো সংকট নেই। দাম বেশি এটিই সমস্যা। এ অবস্থায় আমরা যদি বাজারটিকে ভালোভাবে মনিটর করে দামটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি আর ফ্যামিলি কার্ডসহ সরকার গরিব মানুষকে কম দামে খাবার সরবরাহের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি যদি আরও বাড়ানো যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি লাগামের মধ্যে রাখা যাবে। একটি বিষয় সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখাই কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, অন্য সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে।’

একই কথা বলেছেন অর্থনীতির আরেক গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আইএমএফের ঋণটা এখনও খুবই জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। যতো দ্রুত এই ঋণটা পাওয়া যাবে, বাংলাদেশের জন্য ততোই মঙ্গল। কেননা, যুদ্ধ সহসা থামবে বলে মনে হচ্ছে না। দিন যতো যাচ্ছে পরিস্থিতি ততোই খারাপ হচ্ছে। আর সেই ধাক্কায় আমাদের অর্থনীতির উপর চাপও বাড়ছে।’

‘ঋণটা পাওয়া গেলে রিজার্ভ যেভাবে কমছে, সেটা ঠেকানো যাবে। সরকার একটু স্বস্তি পাবে। অন্য সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে সাহস পাবে। আমি মনে করি, আইএমএফের ঋণটা পাওয়া গেলে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা সামাল দিতে পারবে সরকার।’

আইএমএফের প্রতিনিধিদল আসছে বুধবার

ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল আগামী বুধবার ঢাকায় আসছে বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থাটি। সফরকারী দলটি আগামী ২৬ অক্টোবর বুধবার থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন ঢাকায় অবস্থানকালে বাংলাদেশের জন্য আগামীর ঋণ কর্মসূচি এবং নতুন করে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ও নীতি নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিনিধিদলটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশে সরকারের নীতিনির্ধারক এবং অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গেও আলোচনা করবে। এই প্রতিনিধিদলের ঢাকা আসার মধ্য গিয়ে ঋণ কর্মসূচি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে, যা আগামী মাসগুলোতেও চলমান থাকবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

করোনাভাইরাস মহামারির পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি তৈরির কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপরও চাপ তৈরি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকেও অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের কাছ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চায়। সংস্থাটির কাছ থেকে নিয়মিত কোটার আওতায় পুরো অর্থ এবং রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) প্রোগ্রাম থেকে এবার ঋণ চেয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তাব দেয়।

আইএমএফ মিশনের ঢাকা সফরের কথাবার্তার মধ্যেই গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রস্তাবিত ঋণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে তিনি চলতি অর্থবছরেই প্রাথমিকভাবে দেড় বিলিয়ন ডলার পেতে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় এবার তিনি অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ওই বৈঠকের সাইডলাইনে আইএমএফের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন গভর্নর। সেখানে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য ঠিক রেখে দেশের অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে এ দুই সংস্থার কাছে সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। এর বাইরে জাপানের কাছ থেকেও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশের ঋণ আবেদনের বিষয়ে আলোচনার জন্য এর আগে প্রস্তুতি নেয়ার কথা সংস্থার মিডিয়া বিফ্রিংয়ে জানিয়েছিলেন আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান-মারি গুলদে-উলফ।

শুক্রবার সংস্থাটির প্রতিনিধিদলের আসার দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সফরের উদ্দেশ্য হলো কর্মকর্তা পর্যায়ের চুক্তির অগ্রগতির জন্য আলোচনা করা। সম্ভাব্য বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধা কর্মসূচি এবং নতুন চালু রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফ্যাসিলিট (আরএসএফ) এর অধীনে ঋণ নিয়ে আলোচনার কথা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

আইএমএফের কাছে তিন কিস্তিতে মোট ৪ দশমিক ৫ বিরিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর