বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাপ আরও বাড়ল পুঁজিবাজারে, অনড় বিএসইসি

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ১৫:০০

বুধবার শুরুতে চাপের আভাস ছিল না। লেনদেনের শুরু থেকে সূচক বাড়ছিল। ৪০ মিনিটে ৬২ পয়েন্ট সূচক বেড়ে তা ক্রমাগত ওপরের দিকে উঠছিল। হঠাৎ শুরু হয় দরপতন। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। ফলে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে দিন শেষের সূচকের অবস্থান কমে ৭২ পয়েন্ট।

এক, দুই, তিন করে টানা চার কর্মদিবসে পতনে পুঁজিবাজারে চাপ বাড়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো।

বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৫৯টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৮১টির, আর অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে ২২৬টির, যার প্রায়ই সবই ফ্লোর প্রাইসে। আগের দিনে এই সংখ্যাটা কিছুটা কম ছিল।

হঠাৎ পুঁজিবাজারে এই দরপতনের পর চেক ইস্যুটি সামনে এসেছে। ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না।

এই নির্দেশনার পরই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমতে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য হারে। একসময় যে লেনদেন ২ হাজার কোটির ঘরে ও এর কাছাকাছি হতো, সেটি চলে আসে হাজার কোটির ঘরে।

এদিকে চেক নগদায়ন করার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে বলে স্টক ব্রোকাররা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দেয়। সোমবার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারের পরদিনই পুঁজিবাজারে চাপ বাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থানে অনড় আছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো আভাস নেই তাদের।

আরও পড়ুন: চেক নির্দেশনা না পাল্টালে ‘পুঁজিবাজারে চাপ বাড়বে’

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে সত্যি সত্যি আরও বাড়ল চাপ

বুধবার শুরুতে চাপের আভাস ছিল না। লেনদেনের শুরু থেকে সূচক বাড়ছিল। ৪০ মিনিটে ৬২ পয়েন্ট সূচক বেড়ে তা ক্রমাগত ওপরের দিকে উঠছিল। হঠাৎ শুরু হয় দরপতন। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। ফলে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে দিন শেষের সূচকের অবস্থান কমে ৭২ পয়েন্ট।

এদিন যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে ১০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি আছে হাতে গোনা। যেসব কোম্পানির মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম, সেগুলোর মধ্যে দুই-একটি ছাড়া বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে।

বুধবার ডিএসইতে এক পর্যায়ে সূচক ৬২ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১০ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন

লেনদেন অবশ্য আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ ২ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বেশি।

মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, যা এর আগের ৪৩ কর্মদিবসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন।

গত ১৪ আগস্ট ৬৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার পর ১২ অক্টোবরই এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল।

‘চাপ আছে ফ্লোর প্রাইস নিয়েও’

মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন মনে করেন ফ্লোর প্রাইস ইস্যুতেও একটি চাপ আছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দরে শেয়ার কিনতে চাইছে না। তারা আরও কমে শেয়ার কিনতে চায়। আর এটা না হওয়ায় তারা বিনিয়োগে যাচ্ছে না।

গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এরপর দুই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ৬০০ পয়েন্টের বেশি বাড়লেও বাজারে গতি ফেরেনি। অল্প কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকাই এই সূচক বৃদ্ধির কারণ। অন্যদিকে শক্তিশালী মৌলভিত্তির বহু কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে।’

নিউজবাংলাকে শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘বাজারে এই মুহূর্তে মার্চেন্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম। তারা শেয়ার কিনছেন না। এর কারণেই বাজারে এই মন্দাবস্থা।

‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা চাইলে যেগুলো ফ্লোরে যেসব আছে, সেগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু তারা করছেন না। এর কারণ হতে পারে তারা চান আরও কম দামে শেয়ার কিনতে।’

স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ থাকলে এসব শেয়ারের দাম হয়ত বাড়ত না। দরবৃদ্ধির পেছনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কিছু অংশগ্রহণ থাকলেও মার্কেটে একটা গ্রুপ আছে, যারা এসবের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটতে চায়। এটা তাদেরই কাজ।’

দরবৃদ্ধির সিংহভাগই স্বল্প মূলধনি

নতুন তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি ছাড়া দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা ১০টি কোম্পানির ৯টিরই পরিশোধিত মূলধন এক শ কোটি টাকার নিচে।

বাকিগুলোর মধ্যে একটির পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ৭১ লাখ কোটি টাকা, একটির ৬ কোটি, একটি ৮ কোটি, একটির ১০ কোটি, একটি ১৬ কোটি ৭৭ লাখ, একটি ৪৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

সবচেয়ে বেশি ৯.৯০ শতাংশ দর বেড়েছে নাভানা সিএনজির। শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৩২ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ২৯ টাকা ৩০ পয়সা।

৯.৮৪ শতাংশ দর বেড়েছে তালিকাভুক্তির পর দ্বিতীয় দিনের মতো লেনদেন হওয়া নাভানা ফার্মার। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ টাকায়। আগের দর ছিল ২৬ টাকা ৪০ পয়সা।

টানা দ্বিতীয় দিন ‍সূচক পতনের প্রধান ভূমিকায় দেখা গেছে ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে

এডিএন টেলিকমের শেয়ারদর ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯০ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৮২ টাকা ৮০ পয়সায়।

ছয় কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের অ্যারামিট লিমিটেডের দর ৮.৩৭ শতাংশ, ১০ কোটি টাকা মূলধনের রংপুর ফাউন্ড্রির দর ৭.৭১ শতাংশ, ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের সোনালী আঁশের দর ৭.৪০ শতাংশ, প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূলধনের আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর ৭.২৭ শতাংশ, ৪৩ কোটির বন্ধ থাকা কোম্পানি বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দর ৭.২৬ শতাংশ ও ৮ কোটি টাকা মূলধনের আগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি প্রাণ এর দর বেড়েছে ৬.৬৬ শতাংশ।

এই তালিকার একাদশ থেকে বিংশ পর্যন্ত ১০টি কোম্পানির ৯টিই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি।

দর পতনের শীর্ষ ১০

পতনের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং। ১০ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ১২৪ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিনে লেনদেন হয় ১৩৮ টাকা।

পতনের তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস। ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ দর কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২৮ টাকা ৫০ পয়সা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে ইন্দো-বাংলা ফার্মা। ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে শেয়ারটি সর্বশেষ ২০ টাকা ৯০ পয়সায় হাতবদল হয়। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ২৩ টাকায়।

দর কমার শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল- জেএমআই হসপিটাল, বসুন্ধরা পেপার, অ্যাপেক্স ফুডস, ফারইস্ট নিটিং, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

কোন খাত কেমন করল

ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে থাকলেও লেনদেন কমেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। হাতবদল হয়েছে ১৯৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ১৮.৮২ শতাংশ। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ২১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ২২.১২ শতাংশ।

খাতটিতে ১৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। ১২টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। আর দরপতন হয়েছে ৭টির।

প্রকৌশল খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের প্রায় সমান। ৯টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৯টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। দরপতন হয়েছে ১৪টির।

তৃতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৩টির দরবৃদ্ধি, ৭টির দরপতন ও আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৩টি কোম্পানির।

আর কোনো খাতে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়নি।

চতুর্থ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে। খাতের ২টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি ও অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে ১টির। ৩টির লেনদেন হয়েছে দরপতনে। হাতবদল হয়েছে ৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

সূচকে প্রভাব যাদের

সূচকের পতনে আগের দিনের মতোই প্রধান ভূমিকায় ওরিয়ন গ্রুপের দুটি কোম্পানি। এই গ্রুপের চারটি কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়ে আগস্টের প্রথম দিন থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত সূচক বেড়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই কোম্পানিগুলো দর হারাতে শুরু করেছে।

সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমেছে ওরিয়ন ফার্মার কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দর ১০ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জেএমআই হসপিটাল, বসুন্ধরা পেপার, ইউনিক হোটেল, লাফার্জ হোলসিম, বেক্সিমকো লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংকের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট।

বিপরীতে ২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ২ দশমিক ০২ শতাংশ।

সোনালী পেপারের দর ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট।

ওরিয়ন গ্রুপের কোহিনূর কেমিক্যালস সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।

এর বাইরে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, এডিএন টেলিকম, এসিআই, এসিআই ফর্মূলেশন, রহিমা ফুড, বিডি ফাইন্যান্স ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট।

৮৮ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন করে তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে খাদ্যখাত। ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৯টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে ও ৪টির দরপতনে।

সেবা ও আবাসন খাতে ৭৫ কোটি ৯০ লাখ এবং প্রযুক্তি খাতে ৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন ছিল পঞ্চাশের নিচে।

এ বিভাগের আরো খবর