বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৪৯ দিনে ৮১৪ টাকা দর বাড়ার পর ঘুম ভাঙল বিএসইসির

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২২ ২১:৩৫

গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে ধস পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইসে বেঁধে দেয়ার দিন দর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। বর্তমান দর ৯১৯ টাকা ৬০ পয়সা। বেড়েছে ৮১৪ টাকা ৯০ পয়সা বা ৭৭৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।

ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর ৪৯ কর্মদিবসে ১০ টাকার শেয়ারের দর অবিশ্বাস্যভাবে ৮১৪ টাকা ৯০ পয়সা বাড়ার পর অবশেষে এই ঘটনার নেপথ্যে কী, সেটি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএইসি।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এরপর তারা প্রতিবেদন দেবে বিএসইসিকে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের দাম খুব অল্প সময়ে অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। ডিএসই দেখবে এই দাম বাড়াতে কোন কারসাজি করা হয়েছে কিনা।’

ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর গত ৪৯ কর্মদিবসে এই কোম্পানিটর দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৭৭৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এই দর বৃদ্ধির মধ্যে মধ্যে মোট ৫ বার ডিএসইর পক্ষ থেকে কোম্পানির কাছে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। কোম্পানি জানিয়েছে দাম বাড়তে পারে, এমন কোনো মূল্য সংবেদনশীল অপ্রকাশিত তথ্য কাদের কাছে নেই।

কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয়ের অনুপাতে দর এতটাই বেড়েছে যে, বর্তমান যে হারে আয় করে, সে হারে বর্তমান শেয়ারদরের সমান আয় করতে সময় লাগবে ৬৭১ দশমিক ২৪ বছর।

রকেট গতিতে বেড়েছে দাম

সাম্প্রতিক সময়ে তো বটেই, পুঁজিবাজারে গত এক দশকের মধ্যেও কোনো কোম্পানির এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা যায়নি।

২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে উত্থানের মধ্যেও এই কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল এক শ টাকার নিচে। ৩ মাস আগে ১৩ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৯৫ টাকা ৫০ পয়সা।

গত তিন মাসে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারদর বৃদ্ধির চিত্র

গত ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে ধস পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইসে বেঁধে দেয়ার দিন দর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। পরের কর্মদিবস ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারে উল্লম্ফনের দিন শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬ টাকা ৩০ পয়সা।

শেয়ারটির উত্থান পর্ব শুরু হয় ১৬ আগস্ট থেকে। আগের কর্মদিবস ১৪ আগস্ট দর ছিল ১২৯টাকা ১০ পয়সা।

টানা ১৭ কর্মদিবস বেড়ে ৮ সেপ্টেম্বর শেয়ারদর দাঁড়ায় ৪১৯ টাকা। এরপর টানা তিন দিন দর কমে। ১৩ সেপ্টেম্বর দর দাঁড়ায় ৩৯৫ টাকা ৩০ পয়সা।

এরপর আবার টানা ছয় কর্মদিবস বেড়ে ২১ সেপ্টেম্বর দর দাঁড়ায় ৬০৩ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর দুই কর্মদিবস কমে আবার, দর ২৫ সেপ্টেম্বর দর দাঁড়ায় ৫৬৫ টাকা ৭০ পয়সা। তিন কর্মদিবসে একটি দরেই ঘুরপাক খেয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর দর দাঁড়ায় ৫৬৪ টাকা ৬০ পয়সা।

এরপর থেকে শুরু হয় আরেক অবিশ্বাস্য উত্থানপর্ব। টানা আট কর্মদিবস বেড়ে বর্তমান দর ৯১৯ টাকা ৬০ পয়সা।

২০ কোটির কোম্পানি এখন পৌনে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার

ওরিয়ন ইনফিউশন রোগীর গায়ে পুশ করার আইভি স্যালাইন প্রস্তুত করে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় পাঁচ বছর পর ১৯৯৪ সালে।

এর পরিশোধিত মূলধন এখন ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর শেয়ারসংখ্যা ২ কোটি ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০।

বছরের পর বছর ধরে ১০০ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারদরের গত দুই বছরের চিত্র

শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে সেই কোম্পানিটি এখন ১ হাজার ৮৭২ কোটি ২৮ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ টাকার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।

কেবল এই কোম্পানিটি নয়, ওরিয়ন গ্রুপের আরও দুটি কোম্পানির শেয়ারদরেও ব্যাপক উত্থান দেখা যাচ্ছে।

এর মধ্যে বিকন ফার্মার দর গত ২৮ জুলাই ছিল ২৪০ টাকা ৬০ পয়সা, সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৩৫২ টাকা ২০ পয়সা। মাঝে ৩৯৩ টাকাতেও উঠেছিল।

অন্যদিকে ওরিয়ন ফার্মার দর গত ২৮ জুলাই ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা, সেটি এখন ১১৬ টাকা ২০ পয়সা, মাঝে হয়েছিল ১৩৮ টাকা ৬০ পয়সা। এটি মাঝে উঠেছিল ১৫৬ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত।

আয় ও লভ্যাংশ আহামরি নয়

১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটির আয় বা লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটি ভালো এমন নয়।

২০১৭ সাল থেকে কখনও কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ২ টাকা আয় করতে পারেনি। ওই বছর আয় ছিল ১ টাকা ৫৩ পয়সা, পরের বছর যা হয় ১ টাকা ৬২ পয়সা। ২০১৯ সালে আয় ছির ১ টাকা ৯৭ পয়সা, পরের বছর যা দাঁড়ায় ১ টাকা ৪৬ পয়সা। ২০২১ সালে শেয়ার প্রতি আয় হয় ১ টাকা ৩৭ পয়সা।

গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মার্চ পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৪৩ পয়সা।

এই পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৪০ পয়সা এবং পরের দুই বছর শেয়ার প্রতি এক টাকা করে লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যও খুব একটা বেশি নয়। গত অর্থবছর শেষে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ১৩ টাকা ১০ পয়সার সম্পদ ছিল তাদের, গত মার্চ শেষে যা কিছুটা বেড়ে হয় ১৩ টাকা ৫৫ পয়সা।

কোম্পানিটির রিজার্ভে আছে ছয় কোটি টাকা।]

এর মোট শেয়ারের মধ্যে মধ্যে ৪০ দশমিক ৬১ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার, বিদেশিদের হাতে রয়েছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫১ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার।

এ বিভাগের আরো খবর