আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন শুরু হচ্ছে সোমবার। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলন চলবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত।
বিশ্বের ১৮৮টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরদের অংশগ্রহণে শুরু হতে যাওয়া বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এতে যোগ দিচ্ছেন না। তার পরিবর্তে বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্ব ৯ সদস্যের প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার ঢাকা ছাড়ছে।
কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের এবারের সম্মেলনকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, বৈঠকে দর কষাকষির মাধ্যমে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। আর এই ঋণ পেতে সরকারকে বেশকিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
জানা গেছে, ওয়াশিংটনের এই বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারের সঙ্গে বৈঠকে করবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। সংস্থাটির কাছে ৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ থেকে চলতি বছরের মধ্যেই ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বহুজাতিক এই দুই সংস্থা বছরে দু’দফা বৈঠকে বসে। একটি বসন্তকালীন সভা, যা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়। আরেকটি হয় অক্টোবরে। কোভিডের কারণে গত দুই বছর ভার্চুয়ালি সভার পর এবার সরাসরি বৈঠক হতে যাচ্ছে।
জানা যায়, সম্মেলনের পাশাপাশি আইএমএফের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।
প্রথম দিনের বৈঠকে তারা আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক ডিভিশনের প্রধান রাহুল আনান্দের সঙ্গে বৈঠকে করবে। একই দিনে সংস্থার ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন্থনি এম সায়ের সঙ্গেও বৈঠক করবে দলটি। ১৩ অক্টোবর আইএমএফের অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আর্থিকসহ অন্যান্য খাতের জন্য তিন বছর মেয়াদি একটি সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরা হবে। একইসঙ্গে চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র উপস্থাপন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হবে। ঋণ নিয়ে আমরা আলোচনা করব। তবে কোনো ঘোষণা দেবে না আইএমএফ।’
সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনে বৈঠক শেষ হওয়ার পর চলতি মাসের শেষের দিকে আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনান্দ ঢাকায় আসবেন। সে সময় তিনি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ঋণ পেতে হলে বাংলাদেশকে কিছু শর্ত মানতে হবে। বাংলাদেশ তা মানলে ঋণ প্রস্তাব আইএমএফের বোর্ড সভায় পাঠানো হবে। বোর্ড অনুমোদন দেয়ার পরই অর্থ ছাড় হবে।
আইএমএফ থেকে এই ঋণ পেলে বাংলাদেশের ব্যালান্স অফ পেমেন্ট নিয়ে সম্ভাব্য যে ঝুঁকি রয়েছে তা মোকাবিলা করা সহজ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
করোনার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
বিশ্বব্যাপী সরবরাহজনিত ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়।গত আগস্টে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার। সরকার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি খরচ কমানোসহ নানা উদ্যোগ নিলেও উদ্বেগ কাটেনি।
এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। গত আগস্টে আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় এলেও ঋণ দেয়ার ব্যাপারে সংস্থাটি কিছু বলেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণ চাওয়া হবে। তা অনুমোদন হলে তিন কিস্তিতে ঋণ ছাড় করতে পারে আইএমএফ। সে ক্ষেত্রে প্রতি কিস্তিতে দেড় বিলিয়ন ডলার দেয়া হতে পারে। আর চলতি বছরের মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় হতে পারে।