সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যতগুলো কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে তার দেড় গুণ, তবুও সূচকের উত্থানে লেনদেন হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংশোধনে যাওয়া পুঁজিবাজারে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যে ধস নামে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয় চলতি বছরের ৩১ জুলাই।
এরপর ডলারের বিপরীতে টাকার দামের উত্থান-পতন, এনবিআরের কর পরিপত্র নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছুটা উত্থান-পতনের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত সূচক বেড়েছে ৬১৯ পয়েন্টের মতো।
এই সূচক বৃদ্ধির সুফল সমভাবে পড়েনি পুঁজিবাজারে। অল্প কিছু কোম্পানির দরবৃদ্ধি ও লেনদেনের আগ্রহের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এ উত্থান।
সোমবার লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৮৮টির। বিপরীতে ১৫৫টির দর কমেছে। আগের দরেই লেনদেন হয়েছে ১২৮টি, যেগুলোর প্রায়ই সবই ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে।
এর পরেও প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৫ পয়েন্ট। এই উত্থানেও অল্প কয়েকটি কোম্পানির প্রভাব বিদ্যমান।
আগের দিনের মতোই সূচকের বৃদ্ধিতে শীর্ষে রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানি। সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি দর বাড়ার কারণে ১৬.২৮ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রুপের কোম্পানি বিকন ফার্মা।
সূচক এর চেয়ে কম বাড়ালেও লেনদেন বেশি ওয়েছে ওরিয়ন ফার্মার। ২৪০ কোটি ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কোম্পানিটির। সঙ্গে সূচকে যোগ করেছে ৬.৮৭ পয়েন্ট।
দুটি কোম্পানি সূচক বাড়াতে অবদান রেখেছে ২৩.১৫ পয়েন্ট।
আর বিকন ফার্মার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার বেশি।
লেনদেনে শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেড সূচক বাড়িয়েছে ১৩.৬৫ পয়েন্ট। গ্রুপের আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা সূচকে যোগ করেছে ৪.৯৫ পয়েন্ট। এই দুই কোম্পানি মিলে সূচক বাড়িয়েছে ১৮.৬ পয়েন্ট।
সবচেয়ে বেশি ২৭৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর। হাতবদল হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ১৩৯টি শেয়ার।
অপরদিকে বেক্সিমকো ফার্মার ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৩টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২১ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ টাকায়।
এর বাইরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জেএমআই হসপিটাল, শাপইনপুকুর সিরামিকস, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের লেনদেন হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ কোটির মধ্যে।
একটি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়নি, এমন কোম্পানি ১৬টি। ১০টির নিচে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪টির; ১০ থেকে ১০০টির মধ্যে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০টির।
১০০ থেকে এক হাজারের মধ্যে শেয়ার লেনদেন হওয়া কোম্পানি ৮টি। এ ছাড়াও ৩০টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ হাজারের নিচে।
অন্যান্য শেয়ারে আগ্রহ কম থাকলেও অল্প কিছু কোম্পানির শেয়ারের ওপর ভর করেই লেনদেন আগের দিনের চেয়ে আরও কিছুটা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৫৭১ কোটি টাকার বেশি বেড়ে রোববার লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৮১৩ কোটি ৯২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার। সোমবার হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৯৮৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৭৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
ডিএসইতে ৬৫ পয়েন্ট সূচক বেড়ে সোমবার লেনদেন হয়েছে।
পুঁজিবাজারের চলমান অবস্থায় সতর্কভাবে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ইনডেক্স যেভাবে মুভ করছে, সেভাবে টার্নওভার যাচ্ছে, তবে এটা যেহেতু স্মুথ টার্নওভার নয়, ফলে সতর্ক অবস্থানে থেকে বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ দিন থেকে ধরে যদি বলা হয়, তাহলে দেখা যায় যে, অনেকেই হয়তো তার হোল্ডিংস নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। যখন দেখছেন যে ১০ দিনেও ওই সব আইটেমে র্যালি আসেনি, তখন অধৈর্য হয়ে অনেকেই সেসব সেল করে যেসব আইটেমে র্যালি হচ্ছে, সেসব আইটেমে ঝুঁকেছেন। যারা আরও পাঁচ দিন আগে এসব আইটেমে এসেছেন, তারা চিন্তা না করলেও যারা শেষের পাঁচ দিনে এসেছেন তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ মার্কেটটা এখন ফ্লাইং মার্কেট।’
বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মার্কেট মেকার যারা, তারা খুব সুন্দরভাবে মার্কেটটাকে তৈরি করেছেন। সূচক যেভাবে বাড়ানোর বাড়ছে, আবার যেখানে পজ দিতে হবে, সেখানে দেয়া হচ্ছে।’
কোন খাত কেমন
ব্যাপক দরপতনে কোনো খাতেই খুব বেশি উত্থান দেখা যায়নি, তবে সার্বিকভাবে সবচেয়ে ভালো দিন গেছে বিবিধ খাতে। এই খাতে ১৪টি কোম্পনির মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির। বাকি তিনটি করে কোম্পানির দরবৃদ্ধি ও অপরিবর্তিত ছিল।
প্রকৌশল খাতে ১৫টির দরবৃদ্ধি, ১০টির দর অপরিবর্তিত ও ১৭টির দরপতন হয়েছে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯টির; অপরিবর্তিত ছিল ৮টির।
জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির, কমেছে ১৩টির। আর আগের দরেই লেনদেন হয়েছে দুটির।
এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৬টির, কমেছে ৪টির, বাকি একটির দর অপরিবর্তিত ছিল।
বাকি সব খাতে অল্পসংখ্যক কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে বেশিরভাগের। আর মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে ১০টির লেনদেন হয়নি। বাকি ২৬টির মধ্যে ২৫টির দর স্থির রয়েছে, যেগুলোর সবই ফ্লোর প্রাইসে। বিপরীতে একটির দর কমেছে।
লেনদেনে ওষুধ ও রসায়ন খাতকে টপকে শীর্ষে চলে এসেছে বিবিধ খাত। হাতবদল হয় ৪৭৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতে হাতবদল হয়েছে ৪০৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে হাতবদল হয়েছে ১৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তালিকার পঞ্চম অবস্থানে উঠে এসেছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। তিনটি কোম্পানির সবগুলোর দর বাড়ার দিনে লেনদেন হয়েছে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার। বাকি খাতের লেনদেন ছিল ৫ শতাংশের নিচে।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০টির মধ্যে চারটিই লোকসানি কোম্পানি। শীর্ষে রয়েছে লোকসানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০২০ সালে ৩ টাকা ৬২ পয়সা লোকসানের পরে ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসেই ১ টাকা ২১ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানি।
১০ শতাংশ দর বেড়ে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৭ টাকা ৪০ পয়সায়। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৩৪ টাকায়।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ হাতবদল হয়েছে ১৫৪ টাকা ২০ পয়সায়। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ১৪০ টাকা ২০ পয়সায়।
একই পরিমাণ দর বেড়েছে তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যাটলাস বাংলাদেশের। ২০২১ সালে ৩ টাকা ৯ পয়সা লোকসান গুনেছে কোম্পানিটি। শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ১১৪ টাকা ৬০ পয়সা।
এ ছাড়াও দর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে ন্যাশনাল টিউব, ওরিয়ন ফার্মা, ইস্টার্ন হাউজিং, লোকসানি আজিজ পাইপস, রংপুর ডেইরি, বিডিকম অনলাইন ও লোকসানি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি।
দরপতনের শীর্ষে ১০
এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল। তাদের শেয়ারদর ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।
পতনের তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ দর কমে লেনদেন হয়েছে ২৭৬ টাকা ২০ পয়সায়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স। ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে শেয়ারটি সর্বশেষ ৬০ টাকা ৫০ পয়সায় হাতবদল হয়।
দর কমার শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো সোনালী আঁশ, হাক্কানি পাল্প, অ্যাম্বি ফার্মা, এস আলম স্টিল, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড।