বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলার নিয়ে সিদ্ধান্তের ‘মাথামুণ্ডু নেই’

  •    
  • ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৩৭

ডলারের একক হার হিসেবে যে বিনিময় মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিয়ে অদ্ভুদ-উদ্ভট একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফেদা-এবিবি। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই ভালো ফল দেবে না। বাজারের চাহিদা-জোগান বিবেচনায় নিয়ে একটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না।’

ডলারের একক হার ঠিক করে যে বিনিময় মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে, তা দেখে তাজ্জব বনে গেছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের কোনো মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছেন না তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ বা এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রার ডিলার ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বা বাফেদা ঠিক করেছে যে, এখন থেকে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। তবে রপ্তানি আয় নগদায়ন হবে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকায়। আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তির সময় ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা।

প্রতিটি ক্ষেত্রে এত পার্থক্য দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘এটা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সিদ্ধান্তে বাজার স্থিতিশীল না হয়ে উল্টো আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এই সিদ্ধান্তের কোনো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানি মূল্যের উল্লম্ফনের কারণে দেশে দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার যে অবমূল্যায়ন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা থেকে বাদ নয় বাংলাদেশও। প্রায় দেড় বছর ডলারের দর ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল থাকলেও গত বছরের আগস্ট থেকে বাড়তে বাড়তে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে তা উঠে গেছে ৯৫ টাকায়, কিন্তু খোলাবাজারে একপর্যায়ে কেনাবেচা হতে থাকে ১২০ টাকায়।

সেখান থেকে কিছুটা কমলেও ডলারের দর নিয়ে উদ্বেগ এখনও যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।

আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ছবি

এই পরিস্থিতিতে নতুন যে সিদ্ধান্ত, তাতে জটিলতা আরও বাড়বে বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিয়ে অদ্ভুদ-উদ্ভট একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফেদা-এবিবি। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই ভালো ফল দেবে না। বাজারের চাহিদা-জোগান বিবেচনায় নিয়ে একটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না।’

তিনি বলেন, ‘টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক উল্লম্ফন আমাদের অর্থনীতিকে প্রতি মুহূর্তে তছনছ করে দিচ্ছে। সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে আমাদের।

‘আমদানি কমাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ডলার ছুটছে তো ছুটছেই। কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ফের বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল (রোববার) প্রতি ডলার ১১৪ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।’

বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত কী হতে পারত- এ প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, ‘এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স, রপ্তানি, আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা দাম বেঁধে দেয়ার কোনো মানে হয় না। আমি মনে করি, এই তিন ক্ষেত্রে ডলারের একক দর নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। ব্যবধান খুব বেশি হলে ২ শতাংশ থাকতে পারে।’

তার মতে, ডলারের একক দর এখন ১০৫ টাকা বেঁধে (ফিক্সড) দেয়া উচিত। রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে দরের ব্যবধান বা পার্থক্য এক থেকে দেড় টাকা (খুব বেশি হলে ২ শতাংশ) হওয়া উচিত। তাহলেই বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

ডলারের দর এখন কত

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর ৯৫ টাকা ঠিক করে দিলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক রোববার ১০৪ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক থেকে কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ৯৫ পয়সা। বেসরকারি সিটি ব্যাংক নিয়েছে ১০৭ টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়।

এদিন খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৪ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।

এর আগে মে মাসে খোলাবাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। পরে অবশ্য ১০০ টাকার নিচে নেমে আসে। বেশ কিছুদিন ৯৬ থেকে ৯৮ টাকায় লেনদেন হয়। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তা ফের ১০০ টাকা ছাড়ায়।

করোনার সময় ডলার কিনে দর ধরে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বেচে দর কমাতে চাইছে

করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে ওই অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু আগস্ট থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর।

সেই ধারাবাহিকতায় চাহিদা মেটাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে আমেরিকান মুদ্রা ডলারের দৌড় থামাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (২ মাস ১১ দিন) ২৭০ কোটি (২.৭০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর পরও বাজারে ডলারের সংকট কাটছে না।

তবে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ফের বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয়ও কমা শুরু করেছে। তবে এর মধ্যেও গত ২৬ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়নের ঘরে নেমে গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর