সরকার নিরুপায় হয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে এলে দেশেও কমানো হবে।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা আর অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে রোববার নিজ বাসভবনে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও তেলের দাম কমিয়েছিল জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ডিজেলের মূল্য কমিয়েছিল। ভবিষ্যতেও বিশ্ববাজারে দাম কমলে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে শিগগির জ্বালানির দাম স্থিতিশীল হতে শুরু করবে। সেটা আমাদের জন্য আশার বার্তা বয়ে আনবে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে- এটি স্বীকারও করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘এ কথা সত্য, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে। সরকার এ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখে নেতিবাচক প্রভাব নিম্নপর্যায়ে রাখতে সচেষ্ট।’
স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনমান, কৃষি উৎপাদনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বিভিন্ন ধরনের সহায়তার আওতা বাড়ানোর বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কোন পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে, সেটিও জানান কাদের। বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। যার ফলে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারেও প্রভাব পড়ে, এতে বিপিসিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
‘বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২২ পর্যন্ত বিপিসির লোকসান ছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা, এ প্রেক্ষাপটেই সরকারকে বাধ্য হয়ে মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।’
মন্ত্রী এও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় পাচারের আশঙ্কা ছিল।’
বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের বর্তমান দামও জানান কাদের। বলেন, মিয়ানমারে ডিজেলের লিটারপ্রতি ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা, ভারতে ১১৪ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ১১৭ টাকা ৪৯ পয়সা, আরব আমিরাতে ১২২ টাকা ৮০ পয়সা, নেপালে ১২৭ টাকা ৮২ পয়সা, সিঙ্গাপুরে ১৮৯ টাকা ৭৮ পয়সা এবং হংকংয়ে ২৬০ টাকা ৭৫ পয়সা।
পরিবহন মালিকদের বক্তব্যে আশ্বস্ত মন্ত্রী
নানা সময় বাস ভাড়া বাড়ানোর পর সরকারনির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় করা হলেও এবার তা হবে না বলে আশ্বস্ত হওয়ার কথা জানান কাদের।
বাস ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর বৈঠকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সমন্বয়কৃত ভাড়ার অতিরিক্ত দাবি করবে না। কোনো পরিবহন সমন্বয়কৃত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সরকার দানবে পরিণত হয়েছে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এ দেশে মানুষ হত্যা, জনগণের সম্পদ নষ্ট করা এবং জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে বিএনপিই মূর্তিমান দানবে রূপ নিয়েছে।
‘যারা হত্যার রাজনীতিতে হাতেখড়ি দিয়ে রাজনীতি শুরু করে তারাই দানব, তারা দানবের চেয়েও ভয়ংকর।’
কাদের আরও বলেন, ‘যাদের দুর্নীতির দুর্গন্ধে ভূত পালায় তারাই সরকারের সব কাজে দুর্নীতির দুর্গন্ধ খুঁজে বেড়ায়।’