লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে ডিজেলের দাম হয়েছে ১১৪ টাকা। তারপরও লিটারে প্রায় ৮ টাকার টাকা লোকসান দিয়ে এই জ্বালানি বিক্রি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তবে অকটেনে মুনাফা বেড়েছে।
অকটেনের দাম বেড়েছে ৪৬ টাকা। আগে ১০৮ দশমিক ৪২ টাকার অকটেন ৮৯ টাকায় বিক্রি করে বিপিসির প্রতি লিটারে লোকসান দিতে হয়েছে ১৯ দশমিক ৪২ টাকা। সেখানে এবার এই জ্বালানি বিক্রিতে এক লাফে মুনাফা হবে।
আগের ছয় অর্থবছরে বিপিসি জ্বালানি তেল থেকে মুনাফা করেছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটির ঘরে। ২০২১ সাল থেকে লোকসানের শুরু।
জ্বালানির মূল্য সমন্বয়ের আগে পর্যন্ত বিপিসির দৈনিক লোকসানের পরিমাণ ছিল ১০০ থেকে ১১০ কোটি টাকা। এর প্রায় ৮০ কোটি টাকাই কেবল ডিজেলে। প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা বাড়ালেও এখনও প্রতি লিটারে বিপিসির লোকসান ৮ দশমিক ১৩ টাকা।
বিপিসির নথি অনুযায়ী, এতদিন ৮০ টাকা লিটার বিক্রি করা এক লিটার ডিজেলে বিপিসির খরচ পড়েছে ১২২ টাকা ১৩ পয়সা। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি লিটারে লোকসান দিয়েছে ৪২ দশমিক ১৩ টাকা। দিনে ১৫ হাজার টন ডিজেলে বিপিসির লোকসান ৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৭০০ টাকা।
অন্যদিকে ১০৮ দশমিক ৪২ টাকার অকটেন ৮৯ টাকায় বিক্রি করে বিপিসির প্রতি লিটারে লোকসান দিতে হয়েছে ১৯ দশমিক ৪২ টাকা। দিনে ১ হাজার ১০০ টন অকটেন বিক্রিতে বিপিসির লোকসান ছিল ২ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজারের ওপর।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিপিসির লোকসান ১৭৪ কোটি ২৮ লাখ। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর মার্চে লোকসান হাজার কোটি ছাড়িয়ে ১ হাজার ২১৫ কোটি ৯ লাখে দাঁড়ায়।
এপ্রিলে লোকসান হয় ৯৬৬ কোটি ৭১ লাখ, মে মাসে ১ হাজার ৫১১ কোটি ৯ লাখ, জুনে ২ হাজার ৫২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, জুলাইয়ে ১ হাজার ৬২২ কোটি ৩ লাখ টাকা। কেবল সর্বশেষ ছয় মাসেই প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
ফেব্রুয়ারিতে কেবল ডিজেলে বিপিসির লোকসান ২৮৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, মার্চে ১ হাজার ৩২৩ কোটি ৭৯ লাখ, এপ্রিলে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ৮৪ লাখ, মে মাসে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪৯ লাখ, জুনে ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৪০ লাখ ও জুলাইয়ে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এই ছয় মাসে বিপিসি ডিজেল বিক্রি করেই লোকসান দিয়েছে ৮ হাজার বছর ৮৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
বিপিসি বলছে, জ্বালানি তেল আমদানিতে ডিজেল ও অকটেনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ জুলাইয়ের গড় প্লাস অনুযায়ী বিপিসির দৈনিক লোকসানের পরিমাণ কল্পনাকে হার মানাচ্ছিল। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি দেড় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রতিষ্ঠানটির আশঙ্কা, জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়তে পারে।
বিপিসি বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জোগান-স্বল্পতা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে জাহাজ সংকটের কারণে জাহাজ ভাড়াসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় যেমন- বিমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয় প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২২ সালের শুরু থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে বিপিসি লিখেছে, অব্যাহত লোকসানের কারণে বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান তেলের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য দুই মাসের আমদানি ব্যয় অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখা আবশ্যক।
এতে আরও বলা হয়, কিন্তু জাতীয় বাজেটে তরল জ্বালানি খাতে বিপিসির জন্য ভর্তুকির কোনো সংস্থান না রাখায় যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় ছাড়া চলতি আগস্টের পর থেকে তেল আমদানির বাড়তি ব্যয় বহনের ক্ষেত্রে বিপিসি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়তি থাকার কারণে গত বছর থেকেই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান শুরু হয়। সেই লোকসান বাড়িয়ে দেয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। শুক্রবার পর্যন্ত বিপিসির লোকসানের পরিমাণ ঠেকে দৈনিক ১০০ কোটি থেকে ১১০ কোটি টাকায়।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত সাত বছরে বিপিসি টানা লাভে ছিল, কিন্তু গত এক বছরে তা তলানিতে ঠেকেছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ কোটি থেকে ১১০ কোটি টাকা লোকসান দিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।’
দেশজুড়ে জ্বালানি তেলের নতুন দর কার্যকর হয়েছে শুক্রবার মধ্যরাতে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।
এর আগে গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। তখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল লিটারপ্রতি ৮০ টাকা।