বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্থবছরের প্রথম দিন স্বস্তি দিল না পুঁজিবাজারে

  •    
  • ৩ জুলাই, ২০২২ ১৫:৪৯

গত অর্থবছরের শুরুটা ঝলমলে থাকলেও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিন থেকে পুঁজিবাজারে টানা যে দর সংশোধন শুরু হয়, এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মতভেদ, পরে বছর শেষের সমন্বয়, এরপর নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- পুঁজিবাজারে আস্থা তৈরি হওয়ার মতো যেন কোনো একটি ঘটনাও নেই।

টানা নয় মাস সংশোধনে থাকা পুঁজিবাজার নতুন অর্থবছরের প্রথম কর্মদিবসেও হতাশ করল।

শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম কর্মদিবস রোববার দেশের পুঁজিবাজারে দেখা দিল নেতিবাচক প্রবণতা। কমল বেশিরভাগ শেয়ারের দর, কমল সূচক, ভাটা দেখা দিল লেনদেনও।

গত বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসে দিনভর উঠানামার মধ্যে একে শেষ ১৪ মিনিটে ব্যাপক লেনদেন ও সূচকের লাফ দেখা দিলেও ইতিবাচর প্রবণতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি পরের দিনের বেশিরভাগ সময়।

কেবল লেনদেন শুরুর মিনিট পাঁচেক সময়ে সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়েছিল। কিন্ত সেখান থেকে নেমে আসতে সময় নেয়নি। এরপর সূচক প্রায় পুরোটা সময় ছিল নেতিবাচক।

গত অর্থবছরের শুরুটা ঝলমলে থাকলেও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিন থেকে পুঁজিবাজারে টানা যে দর সংশোধন শুরু হয়, এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মতভেদ, পরে বছর শেষের সমন্বয়, এরপর নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- পুঁজিবাজারে আস্থা তৈরি হওয়ার মতো যেন কোনো একটি ঘটনাও নেই।

এর মধ্যে বড় বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে, ছোট বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশও কেনাবেচা করতে পারছে না। শেয়ারদর কমে যাওয়ায় টাকা আটকে গেছে হাজারো মানুষের। এই পতন থেকে বেরিয়ে আসা যাবে কবে-এ নিয়ে অপেক্ষার যেন শেষ নেই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছিলেন, অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক আঁকেন। বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। যার কারণে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা যায়। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মনে আশা সঞ্চার করে। তবে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই পতনে বিনিয়োগকারীদের সেই আশায় গুঁড়েবালি।

শেষ পর্যন্ত ১৭ পয়েন্ট কমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে।

লেনদেনে বড় ভাটা পড়েছে। আগের কর্মদিবসের চেয়ে ২৮২ কোটি ৯১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা কমে হাতবদল হয়েছে ৬৫৪ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার।

বৃহস্পতিবার ৯৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়।

অর্থবছরের প্রথম দিন বছরের যতগুলো শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ১২০টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে হ্রাস পেয়েছে ২১৯টির। আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ৪৩টি কোম্পানির শেয়ার।

নতুন অর্থবছরের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

লেনদেনের বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ঈদের আগে আর চারদিন লেনদেন হবে। এই সময়ের বাজারটা কাউন্ট না করা-ই ভালো। কারণ, এখন অনেকেই নিজেদের জায়গায় অনড় থাকবেন। যারা মার্জিন লোন নিয়ে ট্রেড করেন, তারা এই অল্প কয়েকদিনের জন্য সুদ টানতে চাইবেন না। সুতরাং ঈদের পরে যে বাজারটা দাঁড়াবে, সেটা দেখে আমরা বলতে পারব যে, বাজার কোন দিকে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে। বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে তাতে। সুতরাং ঈদের পরে বোঝা যাবে আসল পরিস্থিতি, এখনই বাজারকে কোনোভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।’

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

বুধবার গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের দর পতনের বিপরীতে শেয়ার দর বাড়তে শুরু করে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের। বৃহস্পতিবারের পর আজও দর বেড়েছে ৩ টাকা বা ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

শেয়ারটি সর্বশেষ ৩৩ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। ৪ হাজার ৭২১ বারে মোট ৫৮ লাখ ২০৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের দর লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছে। নতুন তালিকাভুক্ত মেঘনা কোম্পানিটি ৮ জুন লেনদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই দিনের সর্বোচ্চ সীমা বা এর কাছাকাছি দর বেড়েছে শেয়ারটির। আজ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ দর বেড়ে সর্বশেষ ৫৪ টাকা ২০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়।

এর পরেই দর বেড়েছে লোকসানি শ্যামপুর সুগারমিলসের। তালিকাভুক্তির প্রতি বছরই বড় অংকের লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। ফলে লভ্যাংশের মুখ দেখেননি বিনিয়োগকারীরা।

৯ দশমিক ৯০ শতাংশ দর বেড়ে ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকা ৭০ পয়সা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে যথাক্রমে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, জিলবাংলা সুগার মিল, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন, বিডি ওয়েল্ডিং, একমি পেস্টিসাইডস, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং লোকসানি দুলামিয়া কটন।

দর পতনের শীর্ষ ১০

দরপতনের শীর্ষে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৫০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।

১ হাজার ৯৬৪ বারে কোম্পানিটির ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৭৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটি সর্বশেষ ১৭৭ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। দর ৫০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪ টাকা ৭০ পয়সা লেনদেন হয়।

লুজার তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, আইসিবি, ন্যাশনাল টি ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

বুধবার গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। পরের দুই দিনই কোম্পানিটির দর কমল সর্বোচ্চ।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ১৯ দশমিক ১০ পয়েন্ট সূচক কমেছে গ্রামীণফোনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের দিনেও কাছাকাছি পয়েন্ট সূচক কমেছিল গ্রামীণফোনের দর পতনে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট কমিয়েছে ওয়ালটন হাইটেকের কারণে। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এর পরেই রেনাটার দর ১ দশমিক ৩২ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট।

এছাড়া আইসিবি, স্কয়ার ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকার টোব্যাকো, তিতাস গ্যাস, ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৫২ দশমিক ২২ পয়েন্ট।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৩৮ দশমিক ৩২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে রবি। এদিন কোম্পানিটির দর ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে। বৃহস্পতিবারেও সর্বোচ্চ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছিল কোম্পানিটি।

সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ। দর ১ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।

বেক্সিমকো লিমিটেড সূচকে যোগ করেছে ৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এ ছাড়া আইপিডিসি, বার্জার পেইন্টস, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, ইউনাইটেড পাওয়ার, সোনালী পেপার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও সাইফ পাওয়ার সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর