দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে আইন প্রণয়নের প্রস্তাবকে সময়োপযোগী ও অতি সাহসী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে দেশের আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
শনিবার ‘প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩ সম্পর্কিত রিহ্যাব-এর প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত ব্যক্ত হয়। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ রাখার দাবি জানানো হয়।
রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)।
তিনি বলেন, দেশ থেকে যাতে টাকা পাচার না হয় সেদিকেই আমাদের বিশেষ নজর দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বাজেটে পাচারকৃত টাকা দেশে আনার বিষয়ে যে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, সেটি খুবই সময়োপযোগী ও অতি সাহসী পদক্ষেপ। তবে একইভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়েও সুযোগ অব্যাহত রেখে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা উচিত।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের আবাসন খাতে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। সরকার ২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেয়েছে।
‘গেল এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। গত বাজেট অনুমোদনের পর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাবে দেশে বিনিয়োগ কম হয়েছে। স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে অর্থনীতিতে একটা ভালো সুফল আসবে।’
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বৈদেশিক মুদ্রা কীভাবে দেশের ভেতর রাখা যায় তার ব্যবস্থা করছে। এ অবস্থায় অপ্রদর্শিত অর্থ পাচারের সুযোগ না রেখে মূল ধারার অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে পারলে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং আসন্ন সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতের ওপর নেয়া পদক্ষেপ ইস্যুতে প্রতিক্রিয়ায় আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন ‘একের পর এক সমস্যা এই শিল্পকে সংকটের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ অসম্ভব। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে পুরো গৃহায়ণ খাতে বিক্রি কমে গেছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। অথচ এবার বাজেটে নেয়া কিছু উদ্যোগ আমাদের সেই সংকটের দিকেই ধাবিত করছে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘গেল কয়েক মাস দফায় দফায় রডের দাম বেড়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, ইস্পাতের কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানো হোক। তা না করে উল্টো বিক্রি পর্যায়ে প্রতি টন বিলেট ও রডে ২০০ টাকা করে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাড়ানো হয়েছে।
‘ঘোষিত বাজেটে লিফটের কর এক লাফে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের তারের বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পাইপের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জিআই ফিটিংসের বিপরীতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অথচ পণ্যটির ওপর সম্পূরক শুল্ক ছিল না।
‘অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর এতদিন সম্পূরক শুল্ক ছিল না। এই পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং টিউব প্লেট ও ইলেকট্রোডস জাতীয় পণ্যে শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
আলমগীর শামসুল আলামিন আরও বলেন, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন ও নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোতে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫০০ টাকা করে বেড়ে গেছে। এর ফলে প্রতি বর্গফুটের জন্য গ্রাহককে ১ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হবে। কারণ ডেভেলপাররা অধিকাংশ জমি নিয়ে থাকে ৫০:৫০ রেশিওতে।
ঘোষিত বাজেটে রাখা এসব বাড়তি চাপ শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপরই পড়বে উল্লেখ করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘এই বাড়তি চাপ আবাসন খাতের সংকট আরও বৃদ্ধি করবে এবং এই সেক্টর আরও ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে সবার জন্য আবাসন- এই স্লোগান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অনেকের আবাসনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।’
মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের স্বার্থে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাস করার আগে রিহ্যাবের দাবি ও প্রস্তাবনা বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন রিহ্যাবপ্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্তেখাবুল হামিদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ নজরুল ইসলাম (দুলাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ লায়ন শরীফ আলী খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দসহ রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।