নির্দিষ্ট অংকের ডাউন পেমেন্টে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের সুবিধা দেয়ার সময়সীমা আরও বাড়াতে ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি পর্যালোচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এমনটা জানিয়েছেন।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সিরাজুল ইসলাম জানান, ঋণ পরিশোধে সুবিধা দেয়ার সময় বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
অর্থঋণ আদালতে ঝুলে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে জোর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গভর্নরের মেয়াদ ৩ জুলাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার আগে এটাই ছিল তার শেষ ব্যাংকার্স সভা। এজন্য সভায় অনেক ব্যাংকার তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক ও সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, একাধিক ব্যাংকের এমডি ঋণ সুবিধা বাড়ানোর বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দুই বছর বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি তারাও এই সুবিধা নিয়েছেন। অনেক ভাল প্রতিষ্ঠান এ সময়ে সুযোগ থাকলেও ঋণ পরিশোধ করেনি। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি সচল। তাই নতুন করে সুবিধা দিলে ব্যাংকগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। হতাশ হবেন ভালো গ্রাহকরাও।
এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেইন। ছবি: নিউজবাংলা
অন্যদিকে কিছু ব্যাংকের এমডি ঋণ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, আর্থিক খাত এখনো করোনার ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠেনি। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তাই নতুন করে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা দেয়া হোক।
বৈঠক শেষে এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেইন বলেন, ‘গভর্নর ফজলে কবিরের এটাই শেষ মিটিং ছিল। তাই বিগত সময়গুলোতে ঘটে যাওয়া ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকে অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ ও এফবিসিসিআইয়ের আবেদন ছিল অন্যতম। এসব বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
‘ব্যাংকারদের জন্য একটি বিশেষ হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের মতো গুরুতর সময়গুলোতে ব্যাংকার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোগান্তি কম হবে।’
ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পর এই রেট কিন্তু স্থিতিশীল আছে।
খেলাপি ঋণ আদায় কীভাবে বাড়ানো যায় সে নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান এবিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাংকই যেন এই আদায়ের হারটা বাড়াতে পারে সে জন্য প্রতিটি ব্যাংকে পৃথক সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায় অনেকটাই বাড়বে।’
ঋণ বিতরণে সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।