বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাচারের টাকা আনতে বাধা দেবেন না: অর্থমন্ত্রী

  •    
  • ১০ জুন, ২০২২ ১৯:৪১

‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের সুযোগ দেয়ার ফলে ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত আসে এবং তারা সফল হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের কেউ এ সুযোগ গ্রহণ করলে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণ, ক্রেতা-ভোক্তা তথা ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।

শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই সময় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘যারা সরকারের দেয়া সুযোগটি গ্রহণ করবেন তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’

‘দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। আমাদের কোনো বাধা দেবেন না’- এমন কথাও বলেন তিনি।

বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ অন্য মন্ত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা

প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার পরদিন প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয় যেসব সমালোচনা তৈরি হয়, তার জবাব দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

২ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে বেশি রভাগ সময়জুড়ে অর্থ পাচার ইস্যুতে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরাও এ বিষয়ে সরকারে অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই ভালো সময়

পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। এ প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান।

একজন সাংবাদিক জানতে চান, সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে ট্রুথ কমিশনে এ ধরনের সুযোগ দেয়ার পর সুবিধাভোগীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এবার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদেরও কী একই পরিণতি হবে?

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের সুযোগ দেয়ার ফলে ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত আসে এবং তারা সফল হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের কেউ এ সুযোগ গ্রহণ করলে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘শুধু ঘুষ আর দুর্নীতি করলেই কালো টাকা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে টাকা অপ্রদর্শিত থেকে যায়। সেই টাকা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা হয় না। আমরা এমন সুযোগ দিয়েছি, যাতে সুযোগটি গ্রহণ করে সেই অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার পর তার আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবে।’

বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিউজবাংলার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ছবি: নিউজবাংলা

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ট্রুথ কমিশন করা হয়েছিল, তখন দেশে কোনো বৈধ সরকার ছিল না। আমরা সাংবিধানিক সরকার। আইনের শাসন ও সংবিধান মেনে চলি। আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ট্রুথ কমিশনে যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, সেটা কোনো আইনসংগত ছিল না। সরকারের দেয়া সুযোগটি যারা গ্রহণ করবেন, তাদের আইন দিয়ে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজেই ট্রুথ কমিশনের সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘করদাতা অজ্ঞতার কারণে তার রিটার্নে অনেক সময় সব আয় প্রদর্শন করে না। এবারের বাজেটে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়াকে কালো টাকা বলি না। আমরা বলি অপ্রদর্শিত আয়। বাজেটে এই অপ্রদর্শিত আয়ই বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোনো কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।’

পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাকার ধর্ম আছে। টাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেখানে সুখ-বিলাস আছে, সেখানে চলে যায়। এটা স্যুটকেসে করে পাচার হয় না। ইলেট্রনিকস টুলসের মাধ্যমে যায়।’

জার্মানি, ফ্রান্স, ইউকে, নরওয়ে, ভারতসহ বিশ্বের ১৭ দেশে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়ার ফলে দেশগুলোতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কাজেই আমরাও আশা করছি এবার বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ কথা বলছি না যে টাকা পাচার হয় না। কিন্তু পাচারকারীকে ধরতে হলে তথ্য-প্রমাণ লাগবে। তা না হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা বসে নেই। পাচারকারীদের ধরার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’

বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নিউজবাংলার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ছবি: নিউজবাংলা

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে কি না, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে চেষ্টা চলছে ফেরত আনার। আমাদের বাধা দেবেন না। বাধা দিয়ে আপনাদের (সংবাদমাধ্যমকে) লাভ কী?

‘বিশ্বের ১৭টি দেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন সে কাজটি করছি।’

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দেয়ার ফলে যারা নিয়মিত ও সৎ করদাতা তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে কি না।

উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধকারীদের অসম্মান করা হবে না। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কাজ করি না। এ সুযোগ আগেও দেয়া হয়েছিল। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এ সুযোগ দিয়েছিলেন। আমি মনে করি, অর্থনীতির মূলধারায় পাচার করা টাকা বৈধ করে ফিরিয়ে আনার জন্য এটিই ভালো সময়। আমার বিশ্বাস, যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে সবাই তা গ্রহণ করবেন।’

অন্য এক প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারকে ভারত সরকার ফেরত দেবে। একইভাবে পাচারকৃত টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে।

চ্যালেঞ্জ আছে, সুযোগও আছে

মূল্যস্ফীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব আদায়সহ অন্যান্য বিষয় সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় উঠে আসে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের সামনে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি অফুরন্ত সুযোগও আছে। কষ্ট আমাদের থাকবে না। এটা চ্যালেঞ্জিং টাইম হলেও আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, সামনে অনেক সুযোগ আসবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারব।’

বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ অন্য মন্ত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘সময়টি অত্যন্ত কঠিন। এই কঠিন সময়ের মধ্যে বাজেটটি দিয়েছি। সামনে অনেক উত্থান-পতন আছে। এগুলোকে অতিক্রম করে সফলভাবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।’

দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘গরিব হওয়া অনেক কষ্টের। কারণ আমি নিজেও একসময় গরিব ছিলাম। এ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কঠিন। তবে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।’

এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে করপোরেট ট্যাক্সের হার কমানো হয়েছে। এতে করে ব্যবসার খরচ কমবে। ব্যবসায়ীরা পুনরায় মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

‘আমি মনে করি, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া উচিত। কারণ তখন লাভের একটি অংশ তারা পুনরায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। যত বিনিয়োগ করা যাবে, তত বেশি কর্মসংস্থান হবে। এই নিয়ম মেনেই এবারের বাজেটটি তৈরি করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের ভেতরে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলোই দেশের মানুষ ব্যবহার করুক। মূল লক্ষ্য ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তেমন পদক্ষেপ নেই কেন– এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

বাজেটে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ সরবরাহ ঠিক থাকলে উৎপাদন বাড়বে। এ জন্য কৃষিতে ফোকাস করা হয়েছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি দ্বিগুণ করা হয়েছে।

এবারের বাজেটের আকার আগের তুলনায় কিছুটা ছোট বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘অর্থাৎ বাজেটকে সংকোচনমুখী করা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে কৃচ্ছ্রসাধনের ওপরে। বিলাসপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা। যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।’

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, ‘বর্ধিত চাহিদা যাতে না বাড়ে, সে জন্য নতুন বাজেটটি সংকোচনমুখী করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব উপকরণই রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খাদ্যসংকট নিয়ে যে রকম হাহাকার শোনা যাচ্ছে, তা আসলে নেই। তবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে শহরের মধ্যবিত্ত কষ্টে আছে। এটা সত্য। কিন্তু দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো হাহাকার নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর