ভর্তুকি-প্রণোদনা চান না পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি মনে করেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া থেকে সরে আসা উচিত। একইভাবে রেমিট্যান্সেও ঢালাও প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত রয়েছে তার।
করোনা মহামারি ও পরবর্তীতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সৃষ্ট বিশ্ব পরিস্থিতিতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা। আছে খাদ্য নিরাপত্তার শঙ্কাও। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ভর্তুকি, ঋণ, নগদ প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়াতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশের বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলেরও এমন পদক্ষেপে যেতে সরকারের প্রতি আহ্বান রয়েছে।
তবে বাজেট পদক্ষেপ ইস্যুতে স্রোতের বিপরীতে নিজের অবস্থান ও মতামত তুলে ধরেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
শনিবার ‘সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে এই আলোচনার আয়োজন করে ‘ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।
আলোচনায় অংশ নেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, আইসিএবির সভাপতি শাহদাৎ হোসেন, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম, বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো চিফ এম শফিকুল আলম প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে কৃষি ভর্তুকি তুলে দেয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হয়। এজন্য কৃষিকে সব সময় আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এখন তো শ্রীলংকা-ভীতিও আছে। বৈশ্বিকভাবেও সারের দাম বাড়ছে। তাই ভর্তুকির বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে।
‘তবে এখন গ্রামে কৃষকের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামে বাড়ি ঘরের রূপ পরিবর্তন হয়েছে, ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করছে। সবাই ভালো আছে। তাই ধীরে ধীরে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া থেকে সরে আসা উচিত।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘বর্তমানে কোনো প্রবাসী দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাচ্ছেন। এছাড়া পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে বিনা প্রশ্নে।
‘প্রবাসীরা দেশে খান না, কিন্তু নিট আয় দেন। ঢালাওভাবে তাদের প্রণোদনা দিলে তার অপব্যবহার হবে। তাই আমি এর পক্ষে নই। রেমিট্যান্সে ঢালাও প্রণোদনা দিলে টেবিলের নিচ দিয়ে অর্থ পাঠিয়ে উপর দিয়ে এনে ঘরে বসেই তারা প্রণোদনা নেবে। যারা মাসে দুইশ’ থেকে তিনশ’ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান কেবল তাদের প্রণোদনা দেয়া দরকার।’
সরকারি অপচয় রোধ এবং প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে বাস্তবায়ন অগ্রগতির উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকাণ্ডে যে আয়েশি ভাব ছিল তার রাশ টেনে ধরা হচ্ছে। চলমান ১৮শ’ প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্ব অনুযায়ী কোনটা আগে বাস্তবায়ন হওয়া দরকার, কোনটা পরে হলেও চলবে তার তালিকা করা হচ্ছে।’