বোরো মৌসুমে নতুন ধান ওঠার পর চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন খোদ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন। বেকারিপণ্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ‘নিত্যপণ্যের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বাজারজাত করা প্যাকেটজাত চালের দাম বেঁধে দিতে সরকারকে পরামর্শও দেন। পাশাপাশি এই মুহূর্তে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলেন।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশে দেশে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দেশের প্রধান এই খাদ্যশস্য নিয়েও তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
হাওরে আগাম বন্যার পর অতিবৃষ্টিতে দেশে ধানের প্রধান মৌসুম বোরো ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এর পাশাপাশি গম আমদানিতে দেখা দেয়া অনিশ্চয়তার কারণে বাড়তি চাপ পড়তে যাচ্ছে চালের বাজারে।
ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে আমদানির প্রধান উৎস ভারত ইউরোপে গম পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য নয় জানানো হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে গম আমদানি অনিশ্চিত হয়ে গেছে। ফলে গমের অপূর্ণ চাহিদা চাল দিয়ে পূরণ করতে গেলে বাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যে এই প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে, বাজারে বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের চালের দাম। সরকারি হিসাবেই এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩ থেকে প্রায় ৮ শতাংশ। চিকন চালের চেয়ে মোটা চালের দাম বেশি বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষরা বিপাকে আরও বেশি। কারণ এই চালের ভোক্তা তারাই।
এ পরিস্থিতিতে সরকার চাল আমদানি উন্মুক্ত করার ঘোষণার পাশাপাশি অবৈধ মজুত রুখতে বাজারে ও মিলে মিলে অভিযান শুরু করেছে। দেশ থেকে চাল কিনে মোড়কজাত করে বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এই বাস্তবতায় মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিন পণ্যসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ এফবিসিসিআই নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শুধু চাল নয়, অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন পণ্যের খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই নেতা।
এই সময়ে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন ধান উঠছে, এ অবস্থায় চালের দাম কমার কথা। উল্টো কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে দেবেন এটা কী করে হয়?’
চালের বাজার, গুদাম ও মিলে সরকারের অভিযানের পক্ষে নিজের অবস্থানের জানানও দেন এফবিসিসিআই নেতা। বলেন, ‘আপনারা ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়িয়ে দেবেন, আর সরকার ধরপাকড় করবে না এটা কি হয়?’
করপোরেটদের চাল বাজারজাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেশিন আনছেন, এতে খরচ কমার কথা, তাহলে দাম কেন বাড়বে?’
সুযোগ পেলেই দাম বাড়বে এটা সরকার বা কেউ সহ্য করবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাল ব্যবসা করে গুলশানে বাড়ি করছেন, বিভিন্ন স্থানে আরও ৮-১০টি করে বাড়ি আছে, আবার বলছেন লোকসান। দু-একজন ব্যবসায়ীর কারণে সব ব্যবসায়ী এর দায় নেবেন না।’
বেকারিপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন এফবিসিসিআই নেতা। বলেন, ‘আমাদের দেশে হাতে বানানো বেকারি পণ্যের ভ্যাট নেই। তাহলে কেন তার দাম বাড়বে? কেন একটা পাউরুটির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা হয়ে যাবে? আমরা তাদের ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম, তা প্রত্যাহারও হয়েছিল, তবে কেন দাম বাড়ালেন?’
ভারত ইউরোপে গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশে তেতে উঠছে এই পণ্যের বাজারও। আটা-ময়দার দাম বেড়ে গেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ময়দা দিয়ে তৈরি বেকারিপণ্যের দামও।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি কোরবানির আগে পেঁয়াজ ও মসলার দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি গরুর বাজারও যেন ঠিক থাকে, সেটাও দেখতে সরকারি তদারকি জোরদারের পরামর্শ দেন।
তেলের দাম স্বাভাবিক রাখতে তিনি বন্দরে তেল খালাসে দীর্ঘসূত্রতা পরিহারেরও পরামর্শ দেন।