বছরের পর বছর ধরে তলানিতে পড়ে থাকা ব্যাংকের শেয়ার এবার তলানি থেকে পুঁজিবাজারের উঠে আসার চেষ্টায় সহায়ক ভূমিকা পালন করল।
পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবিকে ২০৫ কোটি টাকার তহবিল ছাড় করার পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বড় উত্থানের পর দিন সূচক বাড়ল মূলত ব্যাংকের শেয়ারে ভর করে।
আগের দিন ১৩১ পয়েন্ট উত্থানের দিনের লেনদেনও ধরে রাখল পুঁজিবাজার, যদিন যত কোম্পানির দর বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি কোম্পানির দর কমেছে।
দিন শেষে ১৯ পয়েন্ট সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে তিন কর্মদিবসে সূচক বাড়ল ২০১ পয়েন্ট।
সোমবার সূচক বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে যে ১০টি কোম্পানি, তার মধ্যে ৬টিই ছিল ব্যাংক খাতের। এই ছয়টি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে মোট ১৫.১ পয়েন্ট।
এই খাতের ৩৩টি কোম্পানির মধ্যে লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটে লেনদেন বন্ধ ছিল ইউনিয়ন ব্যাংকের। বাকিগুলোর মধ্যে দর কমেছে কেবল একটির। কোম্পানিই এবার ১০ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি এক টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পর রোববার থেকে লেনদেন শুরু করে।
লভ্যাংশ নগদে হলে শেয়ার দর সমন্বয় না হলেও দেশের পুঁজিবাজারে যতটুকু নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা হয়, ততটুকু দাম কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এক্সিম ব্যাংকের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।
রেকর্ড ডেট ২৬ মে এক্সিম ব্যাংকের দর ছিল ১২ টাকা ১০ পয়সা। দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ হওয়ায় এখন ব্যাংকটির দর কমতে পারে ২০ পয়সা। রোববার ২০ পয়সা এবং আজও ২০ পয়সা করে কমেছে।
ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর রেকর্ড ডেটে ছিল ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। ৬০ পয়সা করে দম কমতে পারবে এক দিনে। রোববার ৬০ পয়সা কমার পর সোমবার আগের দিনের নামেই লেনদেন হয়।
বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.৩৪ শতাংশ দর বেড়েছে সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের দর ৬.৬৬ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের দর ৫.৫৫ শতাংশ, এসআইবিএলের দর ৫.১৮ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দর ৪.৭৬ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার দর ৩.৭৮ শতাংশ, এবি ব্যাংকের দর ৩.৭৭ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দর ৩.২২ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের দর ৩.০৭ শতাংশ বেড়েছে।
সোমবার সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৬টিই ছিল ব্যাংক খাতের
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে বাজারে প্রাণ ফেরাতে গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেই বৈঠকে পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে নানা সিদ্ধান্ত হয়।
আইসিবির মাধ্যমে বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ নানা সিদ্ধান্ত হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত সপ্তাহের সোমবার পুঁজিবাজারে উত্থান হলেও পরের দুই দিন আবার দরপতন হয়। তবে বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সূচক বৃদ্ধি, সেদিনই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থছাড়ের প্রতিক্রিয়ায় রোববার দারুণ দিন কাটান বিনিয়োগকারীরা।
চলতি বছর এক দিনে সবচেয়ে বেশি সূচক বাড়ার পরদিন সোমবার লেনদেন শুরু হয় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে। ৪০ মিনিট পর সূচক আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমে গেলেও পরে আবার বাড়তে থাকে।
বেলা সোয়া ১টার দিকে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে থাকে। তখন পরপর দুই দিন বড় উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
কিন্তু এরপর সোয়া এক ঘণ্টায় বিক্রয় চাপ দেখা দেয়। গত মঙ্গল ও বুধবার যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই মুনাফা তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এই পর্যায়ে ক্রেতাদের তুলনায় বিক্রেতাদের সংখ্যা ছিল বেশি। এই সোয়া এক ঘণ্টায় দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সূচক কমে প্রায় ৪০ পয়েন্টের মতো।
সোমবারের লেনদেন নিয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার ইতিবাচক হওয়ার পেছনে কারণগুলো একেবারে দৃশ্যমান। বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে খুব আশঙ্কায় ছিলেন যে, কী হবে? দেখি কী হয়, এ রকম একটা পরিস্থিতি ছিল। এর পরেই অর্থমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংক- এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বেশকিছু কার্যকরী উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আস্থা ফিরিয়েছে। যার কারণে তারা শেয়ার কিনছেন।
‘এ ছাড়া বাজার একটা আকর্ষণীয় জায়গায় দাঁড়িয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দেখছে যে, এখন কিনলে তারা লাভবান হবে। সে কারণে তারা শেয়ার কিনতে শুরু করেছে।’
কোন খাতে কেমন চিত্র
ব্যাংক খাতের পর সবচেয়ে ভালো দিন গেছে সাধারণ বিমায়। এই খাতের ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির। কমেছে বাকি ৬টির। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টির ইউনিটের, কমেছে ৫টির।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে বিবিধ খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। দর বৃদ্ধি ও কমার সংখ্যা সমান। বাকি সব প্রধান খাতে বেশির ভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে।
এর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১১টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৮টির দর, আর্থিক খাতে ৮টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০টির, বস্ত্র খাতে ১৮টির বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৩১টির, প্রকৌশল খাতে ১০টির বিপরীতে ২৯টি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৬টির বিপরীতে ১৫টির, জ্বালানি খাতে ৮টির বিপরীতে ১৩টির দর কমেছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের দর পরপর দুই দিন বেড়েছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশ ব্যাংক জাহাজ নির্মাণ খাতের জন্য ঋণের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে তিনটি কোম্পানির দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। এর বাইরে একটি করে কোম্পানির দর ৮ শতাংশ ও ৭ শতাংশের বেশি, তিনটি করে কোম্পানির দর ৬ ও ৫ শতাংশের বেশি, ৭টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১৫টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৮টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
বিপরীতে ২০টির বেশি কোম্পানির দর কমেছে ২ শতাংশের আশপাশে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটির দর দিনের সর্বনিম্ন সীমায় নামার পর ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়।
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দ্বিতীয়বারের মতো ২ শতাংশে নামিয়ে আনার পর এই বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।