‘প্রশিক্ষণ-গবেষণায় বেশি বরাদ্দ চাই’
বাজেটে শিক্ষা খাতে কোন বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন), সহযোগী অধ্যাপক, আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যে কোনো রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করেছিলেন।
‘কিন্তু পরর্বতীতে সরকারগুলো বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়াচ্ছে। এটি ইতিবাচক দিক।
‘আসন্ন বাজেটে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা, বিজ্ঞান শিক্ষায় বরাদ্দ আরও বেশি দেয়া প্রয়োজন। কারণ গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা কখনই উন্নত রাষ্ট্র হতে পারব না। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায়ও গুরুত্ব দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আগামী বাজেটে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা রাখি।’
‘বিচার বিভাগের বাজেট দ্বিগুণ করতে হবে’
বাজেট ভাবনা জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের বাজেট নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সভা সেমিনারেও কথা উঠেছে। আইনজীবীরাও সোচ্চার। সকলেই জাতীয় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেছেন।
‘সমস্যা হলো যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বা সংসদ কর্তৃপক্ষ যারা আছেন, তাদের চিন্তা হলো, বিচার বিভাগ যদি দুর্বল থাকে তাহলে তাদের জন্য সুবিধা হয়। তারা যা খুশি তাই করতে পারেন।
‘কিন্তু সংবিধানে রাষ্ট্রের যে তিনটি অঙ্গ রয়েছে, তার মধ্যে বাকি দুটি বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর।
‘বিচার বিভাগকে যতদিন পর্যন্ত দুর্বল করে রাখা যাবে, ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রের উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি না।
‘অন্যান্য খাতে প্রতি বছরই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা দরকার। আর এ কাজটি নিশ্চিত করতে হলে তার জন্যে আরও বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।
‘মামলার জট, বিচারক সংকট, জায়গা সংকট, লোকবল সংকটের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ চলছে। এসব ক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এসব কাজের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
‘যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার বিচার বিভাগের জন্য বেশি বরাদ্দ নিশ্চিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে না। আর বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে না।
‘নতুন যে বাজেট আসছে তাতে বিচার বিভাগের জন্য বিদ্যমান বরাদ্দের দ্বিগুণ করতে হবে।
‘স্বাস্থ্যে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত’
স্বাস্থ্য খাতের বাজেট কেমন দেখতে চান, জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য বাজেট জাতির জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ খাতে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য। করোনা মহামারির সময় আমরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার দৈন্যদশা দেখেছি।
‘স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়লেও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা একেবারেই গড়ে ওঠেনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণায় অনেক পিছনে আছে দেশ।
‘আমাদের দেশে প্রায় ১১০টার মতো মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সরকারি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যাও বেড়েছে। তবে দুই বছর করোনা মহামারির মধ্যেও আমরা তেমন কোনো উল্লেখ্যযোগ্য গবেষণা দেখিনি।
‘অন্যদিকে, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে যারা নীতি পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
‘গত এক যুগেরও বেশি সময় বাজেট স্বাস্থ্য সেবা খাতে প্রতি বছর জিডিপির ১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ বাজেটে ব্যয় করা উচিত।
‘প্রথম দাবি হচ্ছে স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একবারে ৫ শতাংশ বাড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। প্রত্যাশা করি, আসন্ন বাজেটে স্বা্স্থ্যখাতে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হোক।
‘দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশল থাকা দরকার। চিকিৎসা ও সেবা ব্যবস্থাপনায় সরকারি খাতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি খাত। তবে বেসরকারি খাত দেখভাল বা পরিচালনা করার জন্য জনবল কম।
‘এবারের বাজেটে বেসরকারি খাতকে দেখাশোনা করার জন্য তদারকির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
‘একটি আদর্শ মানের সেবা নিশ্চিত করার জন্য তিন জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৯ জন নার্স থাকা প্রয়োজন, সেখানে রয়েছে মাত্র দুই জন। এ ছাড়া আরও ফার্মাসিস্টসহ জনবল দরকার। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হতে হবে এবং বাজেটে তার প্রতিফলন থাকতে হবে।’