নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের চড়া দামের তালিকা লম্বা হচ্ছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে অপেক্ষাকৃত স্বল্প মূল্যের প্রোটিনের উৎস ডিমও।
সংরক্ষণজনিত ঝামেলার কারণে গরমের সময়টাতে ডিমের দাম কিছুটা কম থাকে, কিন্তু এ বছর মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ডিমের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মগবাজার-কারওয়ান বাজারের চিত্র
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে এক ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। একই ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে।
ডজন ১২০ টাকা ধরলে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১০ টাকা। যদিও পাড়ামহল্লায় দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১ টাকায়।
মগবাজারের খুচরা কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি ডজনের দাম পড়ছে ১৩২ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সঙ্গে প্রতি হালিতে ৪ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে মগবাজারের দোকানদার ইসহাক মিয়া বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের হিসাব এখানে কইরা লাভ নাই। আমরা খুচরা বেচি। আর ওরা পাইকারিতে প্রতিদিন হাজার হাজার ডিম বেচে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি হালি আমরা ৪৪ টাকা বিক্রি করি আর এক ডজন নিলে ১৩০ টাকা রাখি।’
ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বাড়লেও হাঁসের ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। আগের মতোই প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
একই অবস্থা দেশি মুরগির ডিমের ক্ষেত্রেও। প্রতি ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
কী বলছেন বিক্রেতা-ক্রেতারা
কারওয়ান বাজারে পাইকারি ডিম বিক্রেতা শাহাবুদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে খামারিরা দুষছেন পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়াকে।
তিনি বলেন, সাধারণত এ সময়ে ফার্মের মুরগির রোগবালাই কিছুটা বাড়ে। এটাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ডিমের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা চলছে। কখনও সামান্য কমছে, আবার কখনও বাড়ছে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় হাবিবুর রহমান নামের ক্রেতার সঙ্গে। ডিম কেনার সময় বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুই হাতের নাগালে নেই। ডিমের অবস্থাও একই।
‘সবকিছু শুধু হুহু করে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ না খেয়ে মরবে।’
কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম
ডিমের দাম বাড়লেও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি সাদা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। আর প্রতি কেজি লাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৯০ টাকা।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকায়। খাসি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ দুই ধরনের মাংস একই দামে বিক্রি হয়েছে।
প্রায় অপরিবর্তিত সবজি-মাছের দাম
গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি ও মাছ। কোনো সবজির দাম কমেনি; বরং দুই-একটি সবজিতে দাম কিছুটা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। এ সপ্তাহেও তা ১০০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা রাজীব বলেন, গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে সবজির দাম। কমার কোনো লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, সবজির মধ্যে শসা ৪০, ঢ্যাঁড়শ ৩০, উস্তে ৪০, পটল ৫০, কচুর লতি ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও কারওয়ান বাজারে দেশি জাতের চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে ট্যাংরা ৫০০, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০, কাঁচকি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে।