অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের বৈঠকের পর দিন উত্থান হলেও এরপর টানা দুই দিন দরপতন হলো পুঁজিবাজারে। বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তায় লেনদেনও নেমে এসেছে পাঁচ শ কোটির ঘরে।
সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার দর হারিয়েছে আড়াই শ টি কোম্পানি, যার মধ্যে দর পতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ১১৫ পয়েন্ট পতনের পর দিন ১১৮ পয়েন্ট উত্থানে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চাপ কাটবে ভেবেছিলেন যারা, তারা আবার হয়েছেন আশাহত।
মঙ্গলবার ৫০ পয়েন্ট দরপতন আস্থায় যতটা চিড় ধরিয়েছিল পর দিন আরও ২৩ পয়েন্টের পতন আরও আস্থাহীনতা তৈরি করতে পারে।
অবশ্য লেনদেন শুরুর সোয়া এক ঘণ্টায় সূচক ৭১ পয়েন্ট পড়ে গিয়েছিল। পরে বেলা দেড়টার দিকে এর পুরোটাই পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু শেষ ঘণ্টায় আবার পতন হয়।
দিন শেষে কমেছে ২৫০টি কোম্পানির শেয়ার দর, বেড়েছে ৭৬টির আর অপরিবর্তিত থাকে ৪৯টির দর।
লেনদেন হয়েছে ৫১২ কোটি ৭৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা, যা ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসের লেনদেনের পর সর্বনিম্ন।
অবশ্য গত এক যুগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি থাকে কম, তখন লেনদেনও সেভাবে হয় না।
এবার ঈদের ছুটি শেষে ৫ মে কর্মদিবস থাকলেও পরের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় সেদিন লেনদেন ছিল কম। হাতবদল হয় ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
তবে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববারই লেনদেন ৯৭২ কোটি টাকা ছাড়ায়। এর পরের তিন কর্মদিবসে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়।
১২ মে থেকে বাজারে আবার লেনদেন ও সূচক কমতে থাকে।
সোমবার উত্থানের পর টানা দুই দিন দরপতন দেখল বিনিয়োগকারীরা
ঈদের অবসর শেষে টানা আট কর্মদিবসে ৫৫৫ পয়েন্ট সূচকের পতনের পর রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে।
বৈঠকে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রী। সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে ব্যাংকগুলো আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করবে, সেটাকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমার (এক্সপোজার লিমিট) বাইরে রাখা হবে।
এ ছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেয়া ১৫৩ কোটি টাকার যে তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তহবিলের আকারও বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশও দেন মন্ত্রী।
এই বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ১১৮ পয়েন্টের উত্থান হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে শঙ্কা রয়ে গিয়েছিল, সেটির প্রমাণ পাওয়া যায় লেনদেনেই। বাজারে সক্রিয় না হয়ে আরও অপেক্ষার নীতি নেয়ায় লেনদেন কমে যায় অনেকটাই।
এই ১১৮ পয়েন্টের মধ্যে ৭৩ পয়েন্ট হারিয়ে গেল দুই দিনে।
পুঁজিবাজারের লেনদেন নিয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে এখন সমস্যা হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক। দাবি আদায়ের বাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। বাজার খারাপের কোনো টেকনিক্যাল ইস্যু নেই। অভ্যন্তরীণ চাওয়া-পাওয়ার জেরেই বাজার এমন।
‘বাজার খারাপের ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে তাই পড়ছে, তাহলে যেদিন ১১৮ পয়েন্ট বাড়ল সেদিন কীভাবে অর্থনীতি ভালো হয়ে গেল? আবার পরের দিন যখন ৭০ পয়েন্ট পড়ল তখন কি একদিনই অর্থনীতি খারাপ হয়ে গেল?
‘মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, বাজারকে স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দেয়া হচ্ছে না। যখন ইচ্ছা হচ্ছে তখন কেনা হচ্ছে, যখন ইচ্ছা হল না তখন কিনছে না, এ রকম পদ্ধতিতে বাজার চলছে।’
তিনি বলেন, 'শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ রাইজিংয়ের মধ্যে আছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ অবস্থানে। তারপরও তাদের স্টক মার্কেট হাই। এমনকি ভারতেও তাই। কিন্তু বাংলাদেশের এই অবস্থা!’
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সেল প্রেসার বাড়িয়েছে। একদমই বাই করছে না। কারণ তারা নিচে নামিয়ে কিনতে চায়।'
'এর আগে যখন বাজারের সূচক ৫ হাজারের নিচে নেমে যায় তখন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আট হাজার কোটি টাকার মতো লাভ করেছে, সেটা পত্রপত্রিকায় আমরা দেখেছি। মার্কেট পড়লে আবার তারা কিনবে।'