বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ ব্যবসায় আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক শ্রীলঙ্কান বহুজাতিক কোম্পানি ক্যাল সিকিউরিটিজ।
আগামী ১ জুন থেকে যৌথ মূলধনি কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করছে তারা।
ব্রোকারেজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার কেনাবেচার বাইরেও সঠিক বিনিয়োগে সহায়তা করতে গবেষণানির্ভর ব্যবসা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রাজধানীর বিজয়নগরে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) অডিটরিয়ামে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কোম্পানির চেয়্যারম্যান অজিত ফার্নান্দো, পরিচালক ও বাংলাদেশি অংশীদার গ্রামীণফোনের সাবেক ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ আহমেদ রায়ান সামসি, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিইও) জুবায়ের মহাশিন কবির, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজেশ সাহা, পুষ্প রাজাসহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে শেয়ার কেনাবেচায় স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার লাইসেন্স পেয়েছে ক্যাল সিকিউরিটিজ। শুধু তাই-ই নয়, এই ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বেটা ওয়ান মার্চেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করেছে, যার কার্যক্রম চলমান।
মালিকানা পরিবর্তনের পর প্রতিষ্ঠানটি ক্যাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে পরিচালিত হবে, যা এ দেশের পুঁজিবাজারের বৈশ্বিক বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে কোম্পানির চেয়ারম্যান অজিত ফার্নান্দো বলেন, ‘ক্যাল বাংলাদেশ গতানুগতিক ব্যবসার বাইরে গিয়ে ব্রোকারেজে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা শুরুর আগেই বাংলাদেশের মাইক্রো অর্থনীতির ওপর একটি গবেষণা করেছি, যাতে দেখা গেছে বাংলাদেশে আগামী দিনে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক বেশি। পুঁজিবাজারও অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই আমরা।’
‘আমরা আরও দেখেছি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেটের গুরুত্ব এই মুহূর্তে অনেক বেশি। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই আমরা। এর মাধ্যমে আমরা শুধু গতানুগতিক শেয়ার কেনাবেচায় সীমাবদ্ধ থাকব না; বরং পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির উন্নয়নে বহুমুখী গবেষণাকাজেও জোর দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতে এই গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিবেদন আমরা বিশ্বের সেরা ফ্রন্টিয়ার কোম্পানিগুলোর কাছে তুলে ধরব, যাতে তারা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি ক্যাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নিবন্ধিত ক্লায়েন্টদের মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী করার পাশাপাশি লাভ-লোকসানের পূর্বাভাস বুঝে শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রেও আমরা নেপথ্যে ভূমিকা রাখব।
এতে করে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগও নিরাপদ হবে।’
‘শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। আপনারা সেখানে বিনিয়োগ না করে কেন বাংলাদেশে ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন?’
এক সাংবাদিকের করা উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে অজিত ফার্নান্দো বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য চমৎকার পরিবেশ রয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো এ দেশে ব্যবসা পরিচালনায় শ্রীলঙ্কার তুলনায় খরচ কম এবং মুনাফা বেশি।
‘তা ছাড়া বাংলাদেশে আগামী দিনে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা প্রবল। ফলে কাজ করার অনেক সুযোগও আছে। সে কারণে আমরা বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি।’
কোম্পানির পরিচালক আহমেদ রায়হান শামসি বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন মাত্রায় অবদান রাখতে চায় ক্যাল বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটির ২২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
‘এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই কোম্পানিটির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে কাজ করতে সম্মত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতির দিক থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আগামী ২০ বছর পরে আরও ভালো অবস্থানে যাবে। এই সম্ভাবনা দেখে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বা ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছে।
‘এই ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে, যা বাংলাদেশের সুনাম বা ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াবে। বৈশ্বিক বিনিয়োগও ত্বরান্বিত করবে।’
রাজেশ সাহা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তি এবং গবেষণানির্ভর বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগ পণ্য এবং সেবা চালু করবে, যা বিনিয়োগকারী এবং পুঁজি উত্তোলনকারী উভয় পক্ষের জন্য মূল্য সংযোজন করতে ভূমিকা রাখবে।’
কোম্পানির পরিচালক পুষ্প রাজা বলেন, ‘একটি গবেষণা করেছি, যাতে দেখা গেছে বাংলাদেশে আগামী বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক বেশি।’