বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে বিভিন্ন খাতের ১৩৫ পণ্যের উপর বাজেটের আগে নতুন করে শুল্ক বসানো হয়েছে। এসব পণ্যের উপর সর্বনিম্ন তিন শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করা হয়েছে।
পণ্যগুলো আমদানি করতে বর্তমানে যে পরিমাণ শুল্ক কর লাগে তার সঙ্গে ‘অতিরিক্ত’ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হলো। এর ফলে এসব পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত হবে এবং রিজার্ভের উপর চাপ কমবে।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন শুল্ক হার কার্যকর করেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে অনেকটাই। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও করতে হচ্ছে। এর ফলে আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এই অবস্থায় সরকার বিলাস দ্রব্যের আমদানি সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ যাত্রায় দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি ব্যাংকাররা নিজের টাকায় দেশের বাইরে যেতে পারবেন না, এমন আদেশও জারি করা হয়েছে। এতেও ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকানো যাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন সব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বর্ধিত শুল্ক হার ২৩ মে থেকে কার্যকর করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ কর্মদিবস ৩০ জুন পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। তবে সরকার চাইলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সময় বাড়াতে পারে।
মূলত ফল, ফুল, প্রসাধনী সামগ্রী, ফার্নিচার এই চারটি খাতের বিভিন্ন পণ্যে বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে এনবিআর। আম, আনারস, আপেল, আঙুর, তরমুজ ও পেয়ারাসহ সব ধরনের তাজা ফল আনতে দিতে হবে এই পরিমাণ শুল্ক।
তাজা ফুল আনতেও দিতে হবে বাড়তি এই কর।
ব্রাউন রাইস, আলুর চিপস, চিনি, ফ্লাই অ্যাশ, লুব্রিকেন্ট ওয়েল, টয়লেট পেপার, মেয়েদের মেকআপ, রডের কাঁচামাল, ইনগট, বিলেট, অ্যালুমিনিয়াম তার, গ্লুকোজ, গাড়ির টায়ার, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলস, মোটর কার, স্টেশন ওয়াগন, ডবল কেবিন পিকআপ, প্লাস্টিকসহ সব ধরনের আসবাবপত্রও আছে এ তালিকায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে এসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে আমদানি ব্যয়ের যে চাপ আছে তা অনেকটাই কমবে এবং রিজার্ভের উপর চাপ কমবে।’
পণ্যগুলো আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাড়তি দেড় হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আসবে বলে মনে করছে রাজস্ব বোর্ড। এর মধ্যে ফল আমদানি থেকে আসবে এক হাজার কোটি টাকার মতো।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১০ মে এক পরিপত্র জারি করে আমদানিতে লাগাম টেনে ধরতে এলসি মার্জিনের নগদ টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিল।