ডলারের বিপরীতে টাকার মান আবার ৪০ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি মে মাসেই তৃতীয়বারের মতো কমানো হলো এই মান। তিন দফায় ডলারের দাম বাড়ল ১ টাকা ৪৫ পয়সা।
এখন থেকে ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোকে ৮৮ টাকায় আমদানি বিল আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ নিয়ে চলতি বছর ষষ্ঠবারের মতো বাড়ল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রাটির মান। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমল ছয় দফা।
এটি অবশ্য কেবল বাংলাদেশের চিত্র নয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য ক্রমেই বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে দেশে দেশে। ডলারের টান পড়ায় দেশে দেশেই মুদ্রার মান কমছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মুদ্রার মান বরং কমেছে সবচেয়ে কম হারে। ভারতের মুদ্রার মান কমেছে বাংলাদেশের দ্বিগুণ হারে। আর পাকিস্তানে কমেছে বাংলাদেশের প্রায় ১০ গুণ হারে। মিয়ানমারে কমেছে পাঁচ গুণ হারে।
গত জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ মার্চ তা আবার ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। গত ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় আরও ২৫ পয়সা। তখন ১ ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর গত ১৬ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন করা হয় টাকার। সেদিন টাকার মান ৮০ পয়সা কমিয়ে ডলারের বিপরীতে করা হয় ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
অবশ্য খোলা বাজারে ডলার কিনতে গেলে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি তা ইতিহাসের রেকর্ড ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। টাকার মান আরও কমবে- এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ার পর ১০৪ টাকাতেও ডলারে কেনার ঘটনাও প্রকাশ পায়।
তবে মুনাফা করার আশায় গুড়েবালি হয়েছে। বিদেশযাত্রায় সরকার লাগাম পরানোর পর খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা কিছুটা কমায় দামও কমে ৯০-এর ঘরে চলে এসেছে।
মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার কিনতে সোমবার ৯৮ দশমিক ২০ টাকা গুনতে হয়েছে ক্রেতাদের। এর আগে গত ১৭ মে খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠেছিল।
দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রিও করেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৫৫০ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে তারা।
ডলারের দাম আরও বাড়ায় রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে। আর আমদানি খরচ বাড়া মানে ভোক্তাদের একই পণ্যের জন্য আরও বেশি খরচ করা।
ডলার নিয়ে এই অস্থিরতার মধ্যে ব্যয় সংকোচন এবং ডলারের ওপর চাপ কমাতে অতি জরুরি প্রকল্প ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে অর্থায়নে সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার।পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণও সীমিত করা হয়েছে। বিলাসপণ্যের পেছনে খরচ কমিয়ে আনতে আমদানিতে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সরকার বিশ্ব মন্দার আশঙ্কাও করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।