চলতি সপ্তাহের চার কর্মদিবসের প্রতিদিন হারিয়ে ৩০০ পয়েন্টেরও বেশি পড়ল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।
এই পতনের মধ্য দিয়ে সূচকের অবস্থান নেমে গেল ১০ মাস আগে ২০২১ সালের ১২ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্নে। সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২০৮ পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৮ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৫৬৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক সপ্তাহে কমেছে ৩০৭ পয়েন্ট।
রোববার বুদ্ধপূর্ণিমার বন্ধের পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবার ১৩৪ পয়েন্ট সূচক পতনের পর তিন দিনের প্রতিদিনই বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পড়েছে।
মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর সাত মিনিটে ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে পরে একপর্যায়ে ১১২ পয়েন্ট কমে যায়। তবে শেষ দুই ঘণ্টার ক্রয়চারে শেষ পর্যন্ত ২৭ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ করে লেনদেন।
তৃতীয় কর্মদিবস বুধবারও দেখা যায় একই প্রবণতা। লেনদেন শুরু হয় ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমে যায় ৯৩ পয়েন্ট।
শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেই দেখা দেয় দরপতন। এক ঘণ্টায় সূচক পড়ে যায় ৮০ পয়েন্টের বেশি। কিন্তু বেলা দেড়টার দিকে হারানো সূচক পুনরুদ্ধার হয়ে বাড়ে আরও ১৫ পয়েন্ট। কিন্তু এরপর দেড় ঘণ্টায় আবার দেখা দেয় দরপতন। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৫১ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।
এ নিয়ে ঈদের অবসর শেষে দুই দিন বেড়ে পরে টানা সাত কর্মদিবসে সূচক পড়ল ৪৩৯ পয়েন্ট।
দিন শেষে ২৬৩টি কোম্পানি দর হারায়। বিপরীতে বাড়ে ৬৭টি। দর ধরে রাখতে পারে ৫০টি কোম্পানি।
সোমবার বড় দরপতনের পর প্রতিদিনই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পড়েছে
পুঁজিবাজারে এই দরপতনের পেছনে নানা বিষয়, শঙ্কা কাজ করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশেও একই পরিণতিক আশঙ্কার পর সবশেষ যোগ হয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার মান হারানোর বিষয়টি।
গত এক মাসে টাকার দর কমেছে তিন শতাংশের বেশি, তবে মঙ্গলবার খোলাবাজারে ডলারের দাম সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি ছিল আরও অন্তত ১৫ টাকা।
- আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে ধস: এবার ফ্লোর প্রাইস নয়
এই পরিস্থিতিতে আরও দরপতনের আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা কম দামে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছেন। এর পাশাপাশি আইসিবির ব্যাংক ঋণ পরিশোধে শেয়ারের বিক্রয়চাপ রাখে ভূমিকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত এই বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আশ্বস্ত করেছে যে ব্যাংকের ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে তাদের প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনায় আছে। পাশাপাশি তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনিয়োগের জন্য আরও ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে আরও টাকার জোগান দেয়ার ঘোষণা এসেছে।
তবে কোনো টোটকাই এবার কাজে লাগছে না। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবার বাজারে হস্তক্ষেপ না করে তাকে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর এভাবে দরপতন হতে থাকা পুঁজিবাজারে প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এবারও সেই দাবি জোরালোভাবে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে।
তবে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেছেন, তারা এটা করবেন না। এর কারণ, তাদের বিবেচনায় এই পদক্ষেপগুলো বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমায়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর ধস ঠেকাতে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করাটাও ক্ষতির কারণ হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য খুবই খারাপ সপ্তাহ গেলো একটা। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন নেই বললেই চলে। সবাই হতাশ-ক্ষুব্ধ’
কেনো বাজারে টানা পতন হচ্ছে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরাও বুঝতে পারছি না, কেন এমনটা হচ্ছে। বাজারে উত্থান-পতন থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার তো সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে। এখন কোনো কারণ ছাড়াই পতন হচ্ছে। পুরোপুরি গুজবনির্ভর হয়ে পড়েছে বাজার। নানান দিক থেকে নানান ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই গুজবে ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা, বিক্রির চাপে সূচক পড়ছে।’
এদিন চারটি কোম্পানি দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। আরও একটি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আরও দুটির দর সাত শতাংশ, একটির দর ছয় শতাংশ, দুটির দর চার শতাংশ বেড়েছে।
ওদিকে ১৫টির মতো কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে যতটা কমা সম্ভব ততটাই। এর মধ্যে একটির দর ৫ শতাংশ, ২২টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৮টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৪৯টির দর কমেছে দুই শতাংশের বেশি।