দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দরের ছয় ক্রেনের তিনটিই অচল হয়ে পড়ে আছে; আর এতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য লোড-আনলোড বা ওঠানো-নামানোর কাজ। স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। আটকে আছে আমদানি পণ্যবোঝাই শত শত ট্রাক; সৃষ্টি হয়েছে জটের।
এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে চার হাজার টন পণ্য ইকুইপমেন্ট বা ক্রেনের মাধ্যমে লোড-আনলোড হয়ে থাকে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজ এ কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ছয়টি ক্রেন সরবরাহ করা হয়েছে; কিন্তু অর্ধেকই অর্থাৎ তিনটিই নষ্ট হয়ে অচল পড়ে আছে। বাকি তিনটি দিয়ে কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা করলেও সেগুলোও আবার মাঝেমধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এতে বন্দরে লোড-আনলোড প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্সের সাব-কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণে বন্দরে ভারী পণ্য লোড-আনলোড স্থবির হয়ে পড়েছে। কোনো পণ্য লোড বা আনলোডের জন্য ক্রেন সিরিয়াল দেয়া হলে ক্রেন পাওয়া যায় এক সপ্তাহ পর। সময়মতো লোড-আনলোড না হওয়ায় ট্রাক ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা।’
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ্জোয়া সেলিম বলেন, ‘চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে বেনাপোল বন্দরের লোড-আনলোড কার্যক্রম। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ১০ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে চার হাজার টন পণ্য ক্রেনের মাধ্যমে লোড- আনলোড হয়ে থাকে।’
বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে চার হাজার টন পণ্য ইকুইপমেন্ট বা ক্রেনের মাধ্যমে লোড-আনলোড হয়ে থাকে। ফাইল ছবি
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্লাক বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজ আমদানি করা ভারী পণ্য লোড-আনলোডের জন্য ছয়টি ক্রেন ও ১০টি ফরক্লিপ্ট সরবরাহ করেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আবার এসব ক্রেন বা ফরক্লিপ্ট অধিকাংশ সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। বর্তমানে বন্দরে তিনটি ক্রেন কাজ করছে। পণ্য লোড-আনলোডের জন্য ক্রেন সিরিয়াল দেয়া হলে সে পণ্য লোড-আনলোড হচ্ছে ৮-১০ দিন পর।’
‘ফরক্লিপ্টগুলোর অবস্থাও একই রকমের। ১০টি ফরক্লিপ্ট থাকলেও অর্ধেকের বেশি বেশি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আমার ১৮ ট্রাক মাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করলেও গত এক সপ্তাহে বন্দরে আনলোড করতে পারছি না। আনলোড করতে না পারায় প্রতিদিন আমাকে ট্রাকপ্রতি ২ হাজার টাকা করে ডেমারেজ দিতে হচ্ছে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিদিন ভারত থেকে ৩০০-৩৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে একটি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পণ্য আনলোড হতে সময় লাগছে সাত-আট দিন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্রেন-ফরক্লিপ্টের সমস্যা।’
‘বেনাপোল বন্দরে যেখানে ১৫-২০টি ক্রেন দরকার, সেখানে আছে মাত্র ছয়টি। এ ছয়টির মধ্যে তিনটিই আবার অকেজো হয়ে পড়ে আছে। পর্যাপ্ত ক্রেন না থাকার কারণে এক ট্রাক পণ্য লোড-আনলোড হতে সময় লাগছে ৮ থেকে ১০ দিন। বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে আমরা বারবার ক্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও তারা কোনো কর্ণপাত করছেন না।’
বেনাপোল বন্দরের ক্রেন-ফরক্লিপ্টে সরবরাহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্লাক বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মিল্টন বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে বর্তমানে অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মালামাল আমদানি হচ্ছে। এসব ভারী অ্যাংগেল ওঠানামা করতে প্রায়ই ক্রেন নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে তিনটি ক্রেন দিয়ে পণ্য লোড-আনলোড করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
‘নষ্ট তিনটির মেরামতের কাজ চলছে। আরও দুটি ক্রেনের প্রয়োজন জানিয়ে অফিসকে জানানো হয়েছে। নষ্ট ক্রেন তিনটি ভালোসহ আরও দুটি ক্রেন এলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
বেনাপোল বন্দরের ডেপুটি পরিচালক মামুন তরফদার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে ক্রেনের মাধ্যমে পণ্য লোড-আনলোডের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেন-ফরক্লিপ্টোর সমস্যার কারণে বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছি। তারা ক্রেনের সংখ্যা বাড়ালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’