বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফের পতনের ধারায় পুঁজিবাজার

  •    
  • ১২ মে, ২০২২ ১৫:০৮

ঈদের আগে থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েও আবার পতনের ধারায় ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাজার নিয়ে যে আস্থাহীনতা তার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা গুজবের প্রভাব কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। এ ছাড়াও একটি বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিও হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রির বিষয়টি সামনে এসেছে। এসব ঘটনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা পরিণত হয়েছে ক্ষোভে।

ঈদের পর টানা তিন কর্মদিবসে বাড়তে থাকার পর এবার টানা দুই দিন কমল লেনদেন। তা আবার নেমে এসেছে এক হাজার কোটি টাকার নিচে।

এক দিনেই কমল আরও প্রায় আড়াই কোম্পানির দর। এর মধ্যে দর পতনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কম দেখা গেছে।

সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে সূচক ৫৪ পয়েন্ট বাড়ার পর টানা তিন দিনে সূচক কমল ১৩২ পয়েন্ট।

এর মধ্যে মঙ্গলবার লেনদেনের অর্ধেকটা সময় সূচক বেড়ে লেনদেন হতে থাকলেও শেষ আধাঘণ্টায় হঠাৎ সূচক নেমে আসতে থাকে। পরের দিনও একই প্রবণতা দেখা যায়। শেষ আড়াই ঘণ্টায় সূচকের পতন হয় আরও বেশি।

বৃহস্পতিবারের প্রবণতা ছিল এ থেকে ভিন্ন। লেনদেনের শুরুতেই সূচক অনেকটাই কমে গেলেও পরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়। এরপর আবার পড়ে।

প্রথম আধাঘণ্টায় সূচক পড়ে যায় ৩৭ পয়েন্ট। তবে পরের ২৫ মিনিটে সেখান থেকে ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে সূচকে যোগ হয় ৬ পয়েন্ট।

এরপর সূচক আবার পড়ে দুপুর ১২টার দিকে আগের দিনের চেয়ে বেড়ে লেনদেন হতে থাকে। পরে সেখান থেকে আবার পড়ে।

শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট কমে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৬৫ পয়েন্ট।

সূচকের অবস্থান নেমে গেল গত ১৯ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৫৩০ পয়েন্ট।

সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে সূচক ৫৪ পয়েন্ট বাড়ার পর তিন দিনে কমল ১৩২ পয়েন্ট

ঈদের আগে থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েও আবার পতনের ধারায় ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাজার নিয়ে যে আস্থাহীনতা তার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা গুজবের প্রভাব কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। এ ছাড়াও একটি বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিও হিসাব থেকে শেয়ার বিক্রির বিষয়টি সামনে এসেছে।

এসব ঘটনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা পরিণত হয়েছে ক্ষোভে।

পুঁজিবাজারের প্রবণতা নিয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, 'লেনদেন তলানীতে নামার পর কাঙ্ক্ষিত টার্নওভার ছিল ৮০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকা, যেটা দুই দিন আগে ছাড়িয়েছিল। এখন আবার সেটা নিচে নেমে গেছে। এর কারণ মার্কেটের নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হচ্ছে না। সেল প্রেসারের কারণে টার্নওভার বেশি দেখাচ্ছে কিন্তু বায়ার দাঁড়াচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই সমন্বয়টা হতে হবে।’

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকায় নাখোশ মাহবুব। বলেন, ‘অতীতে দেখা গেছে, যখনই বাজার নিম্নমুখী হয় তখনই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন আরেকটু ভালো সুযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু এটি বাজারকে স্থিতিশীল হতে দিচ্ছে না।’

সূচক কমাল যেসব কোম্পনি

সূচক যত কমেছে তার ৩০ শতাংশই ফেলেছে গ্রামীণ ফোন একাই। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১.৬২ শতাংশ কমার কারণে সূচক পড়েছে ৮.১১ পয়েন্ট।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর দর ০.৬২ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে ২.২৯ পয়েন্ট, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওয়ালটনের দর ০.৫০ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে ২.০৭ পয়েন্ট। চতুর্থ অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডের দর ১.৩৭ শতাংশ কমায় সূচক ২.০৬ পয়েন্ট কমেছে।

এছাড়া ব্র্যাক বাংক ও রবির দরপতনে ১.২৩ পয়েন্ট করে, এনআরবিসির দরপতনে ০.৯৬ পয়েন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ারের দরপতনে ০.৮৯ পয়েন্ট, পূবালী ব্যাংকের দরপতনে ০.৭৩ পয়েন্ট এবং বার্জার পেইন্টসের দরপতনে সূচক কমেছে ০.৭ পয়েন্ট।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক পড়েছে ২০.২৭ পয়েন্ট।

বিপরীতে সূচকে পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে খুব কম সংখ্যক কোম্পানিই। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১.৫৮ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বিকন ফার্মা। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২.২৯ শতাংশ।

এছাড়া স্কয়ার ফার্মা ১.১৫ পয়েন্ট, জেএমআই হসপিটাল ০.৮৪ পয়েন্ট, শাইনপুকুর সিরামিকস ০.৬৮ পয়েন্ট, রেনাটা ০.৪৭ পয়েন্ট, আরএকে সিরামিক ও ইউসিবি ব্যাংক ০.৪৫ পয়েন্ট করে, সালভো ক্যামিকেল ০.৪০ পয়েন্ট, এসিআই ফর্মুলেশন ০.৩৯ পয়েন্ট এবং নাহী অ্যালুমিনিয়ম ০.৩১ পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে।

সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করা ১০ কোম্পানির কারণে সূচক বেড়েছে ৬.৭২ পয়েন্ট।

দরপতনের শীর্ষ ১০

এই তালিকার প্রায় সব কটি কোম্পানিই দুর্বল মৌলভিত্তির, যেগুলোর লভ্যাংশের ইতিহাস ভালো নয় কোনো বিবেচনাতেই। কয়েকটি আছে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি।

এই তালিকার শীর্ষে দেখা গেছে বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিক, যার দর গত কয়েকদিন ধরেই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে দেখা গেছে।

গত ২৭ এপ্রিলও কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২৬ টাকা ৪০ পয়সা। সাত কর্মদিবসে সেখান থেকে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা। বেড়েছে ৬২.৮৭ শতাংশ।

এর মধ্যে আজ বেড়েছে ৯.৯৭ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ৩৯ টাকা ১০ পয়সা। বাড়ার সুযোগ ছিল ৩ টাকা ৯০ পয়সা। এতটাই বেড়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ফুওয়াং সিরামিক, যার দরও এক দিনে যতটা সম্ভব বেড়েছে ততটাই। আগের দিন দর ছিল ১৬ টাকা ২০ পয়সা। ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯.৮৭ শতাংশ বেড়ে নতুন দাম ১৭.৮০ শতাংশ।

এই দুটি কোম্পানির দরই এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। এর বাইরে বিডি থাই ফুডের দর সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। দর বেড়েছে ৯.১৪ শতাংশ।

এর বাইরে সালভো ক্যামিকেলসের দর ৮.৮৪ শতাংশ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৭.৭৯ শতাংশ, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্ডস ফান্ডের দর ৬.৮৪ শতাংশ, জেএমআই হসপিটালের দর ৬.৬৬ শতাংশ, নাহী অ্যালুমিনিয়মের দর ৫.৯৯ শতাংশ, লাভেলো আইসক্রিমের দর ৫.১০ শতাংশ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলের দর ৫.০৭ শতাংশ বেড়েছে।

শীর্ষ দশের বাইরে আরও একটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশ, ২টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৩ টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১১টির দর ২ শতাংশ বেড়েছে।

দর পতনের শীর্ষ ১০

এই তালিকার শীর্ষে ছিল সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানি। ১০টির মধ্যে চারটিই এক খাতের। এর বাইরে দুটি কোম্পানি কাগজ ও প্রকাশনা খাতের।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪.৯৯ শতাংশ দর কমেছে পেপার প্রসেসিংয়ের। দ্বিতীয় অবস্থানে ছির মনস্পুল পেপার, যার দর কমেছে ৪.৯৭ শতাংশ।

গত বছর ওটিসি মার্কেট থেকে ফেরা কোম্পানিগুলোর দর অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন হলে সেগুলো দর হারিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে আবার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় দর। সম্প্রতি আবার সংশোধন হচ্ছে।

তৃতীয় অবস্থানে ছিল ওটিসি ফেরত তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, যার দর কমেছে ৪.৯২ শতাংশ। এই কোম্পানির শেয়ারদরও কাগজ খাতের দুই কোম্পানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠানামা করছে।

চতুর্থ অবস্থানে ছিল জেমিনি সি ফুড, যেটির দর সম্প্রতি ৫৫৩ টাকা ৯০ পয়সায় উঠে গিয়ে পড়ে টানা পড়ছে। বর্তমান দর ৩৪২ টাকা ৪০ পয়সা।

বিমা খাতের চারটি কোম্পানির মধ্যে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর ৪.১৯ শতাংশ, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৯৭ শতাংশ, এশিয়ান ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৫৫ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.২০ শতাংশ কমেছে।

অন্য দুটি কোম্পানি হলো জি কিউ বলপেন যার দর ৩.০৭ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ফিড মিলের দর ৩.০৪ শতাংশ কমেছে।

এই তালিকার ৫ নম্বরে এনআরবি কমার্শিয়ার ব্যাংকের নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এর লভ্যাংশ সংক্রান্ত সমন্বয় হয়েছে।

কোম্পানিটি এবার শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে যার অর্ধেক নগদ এবং অর্ধেক বোনাস। বুধবার রেকর্ড ডেটে দর ছিল ২৩ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ দাম কমে হতে পারত ২২ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ২২ টাাক ৮০ পয়সা।

এ বিভাগের আরো খবর