বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ঈদ অবসর’ শেষে লেনদেনে ‘চার শুভ ইঙ্গিত’

  •    
  • ৮ মে, ২০২২ ১৫:০৭

গত ৩১ মার্চের পর সবচেয়ে বেশি লেনদেনের দিন দুইশরও বেশি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। সূচকও বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট। এদিন আটটি কোম্পানির দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন করেছে। অন্যদিকে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে কেবল একটি কোম্পানির।

ঈদ ছুটির পরে এক দিনের কর্মদিবস শেষে আরও ‍দুই দিনের সাপ্তাহিক বন্ধ বিবেচনায় টানা নয় দিনের অবসর কাটিয়ে রাজধানী কর্মব্যস্ত হয়ে উঠার প্রথম কর্মদিবসে ভালোই দিন গেল।

লেনদেন হলো ২১ কর্মদিবসের সর্বোচ্চ। গত ৩১ মার্চ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনের পর এই প্রথম হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি যেতে পারল না।

দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি, এরপর মে দিবসের ছুটির সঙ্গে ঈদের ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে লেনদেন হলেও সেদিন প্রাণ ছিল না সেভাবে। এবারই প্রথম নয়, গত দুটি বছর বাদ দিলে তার আগে এক যুগ ধরেই দেখা গেছে, ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনে গতি থাকে না।

বৃহস্পতিবার ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ ৬৬ হাজার টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল কেবল। বেশিরভাগ শেয়ার দর হারানোর দিন সূচক কমে ১২ পয়েন্ট। এরপর দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার লেনদেন হয়েছে এর দ্বিগুণের বেশি।

যে চার শুভ ইঙ্গিত

এদিন হাতবদল হয়েছে ৯৭২ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, যা গত ৩১ মার্চের পর সর্বোচ্চ। সেদিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে লেনদেন ক্রমাগত কমতে কমতে এক পর্যায়ে চার শ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছিল। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করে। তখন থেকে লেনদেন বাড়তে থাকে।

বিএসইসির এই আদেশ আসার পর কিছু বিনিয়োগকারী অবশ্য আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কারণ, এর আগে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর ২ শতাংশ কমে ক্রেতাশূন্য হয়ে যাচ্ছিল।

দ্বিতীয় যে দিকটি দেখা গেছে, সেটি হলো সূচকের বৃদ্ধি।

দিনভর উঠানামা করে শেষ বেলায় ক্রয়চাপে সার্বিক সূচক বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট।

এদিন লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। তবে বেলা ১০টা ২১ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে কমে গিয়েছিল। এরপর থেকে শুরু হয় ক্রয়চাপ।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সূচক আরও ২৭ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে থাকে। বেলা ১ টা ১০ মিনিটের দিকে সেখান থেকে আবার নেমে আসে অনেকটাই। শেষ ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে আবার ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা দেখা দেয়।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে উঠানামা করতে করতে সূচক শেষ পর্যন্ত বাড়ে শেষ দেড় ঘণ্টায়র ক্রয়চাপে

দুই শতাধিক কোম্পানির দর বাড়াও বিনিয়োগকারীদের স্বস্তির একটি কারণ। এদিন বেড়েছে ২১৬টি শেয়ারের দর, কমেছে ১১২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫২টির দর।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থাকার সময় এক দিনে তিন শ বা কাছাকাছি সংখ্যক কোম্পানির দর পতনের চিত্র দেখা গিয়েছিল।

এদিন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, বস্ত্র এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের বিনিয়োগকারীরা ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে।

তবে ঈদের আগে আগে ভালো সময় যাওয়া ব্যাংক, বিমা খাতে বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে।

বাজার স্বাভাবিক চিত্রে ফেরার চতুর্থ যে ইঙ্গিতটি পাওয়া গেছে, সেটি হলো এদিন আটটি কোম্পানির দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন করেছে। রোজায় এই বিষয়টি দেখা যায়নি বললেই চলে।

এই গোটা মাসে কোনো দিন কেবল একটি বা কোনো দিন দুটির দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁতে দেখা গেছে। আবার কোনোদিন কোনো কোম্পানির দরই সার্কিট ব্রেকার ছুঁতে পারেনি।

অন্যদিকে দর পতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে কেবল একটির। এই কোম্পানিটির দর আবার গত তিন মাসে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে তিন গুণ হয়ে গিয়েছিল।

অথচ রোজায় এক দিনে ২০০টি কোম্পানির দরও দিনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হয়েছে।

ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার ভালোর দিকে। আজকে সূচক ইতিবাচক ছিল, ট্রেডও ভালো হয়েছে। তবে আরও চার দিন যদি ভালো যায়, তবে মানুষের আস্থা ফিরবে, বিনিয়োগ বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন অন্য দিকে সুযোগ কম থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ইনভেস্টমেন্ট বাড়ে। মানি মার্কেট তো অনেক কঠিন, এজন্য মানুষের বিনিয়োগের জায়গা কমে গেলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ে এবং ভালোর দিকে।’

সূচক বাড়ল যেসব কোম্পানির কারণে

সূচকে সবচেয়ে বেশি ৩.০২ পয়েন্ট যোগ করেছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির দর ০.৫৩ শতাংশ বেড়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২.৩৯ পয়েন্ট যোগ করেছে গ্রামীণফোন। বড় মূলধনি বহুজাতিক এই কোম্পানিটির দর বেড়েছে ০.৩৪ শতাংশ।

তৃতীয় অবস্থানে ছিল মবিল যমুনা, যার শেয়ারদর বেড়েছে ৪.৩৯ শতাংশ, যার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ১.৯৯ পয়েন্ট।

এছাড়া প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের দর ৮.৯৫ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১.৭৮ পয়েন্ট, ইফাদ অটোর দর ৭.৯৫ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১.৬৩ পয়েন্ট, আর এ কে সিরামিকের দর ৫.৩৭ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১.৫৮ পয়েন্ট, জিপিএইচ ইস্পাতের দর ৩.৮৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১.৫৫ পয়েন্ট, পাওয়ার গ্রিডের দর দর ২.১৬ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১.৪৯ পয়েন্ট, সাইফ পাওয়ারটেকের দর ৬.৩৮ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১.৩৪ পয়েন্ট, বেক্সিমকো ফার্মার দর ১.০৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১.২৯ পয়েন্ট।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে ১৮.০৬ পয়েন্ট।

অন্যদিকে সিটি ব্যাংকের শেয়ারদরে লভ্যাংশ সংক্রান্ত কারণে সমন্বয়ের প্রভাবে সূচক ৬.৫২ শতাংশ কমেছে। কোম্পানিটি এবার ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার অর্ধেক নগদে, অর্ধেক বোনাসে।

রেকর্ড ডেট ৫ মে লেনদেন বন্ধ থাকার পর আজ দর সমন্বয় হয়েছে। রেকর্ড ডেটে দর ছিল ২৮ টাকা ১০ পয়সা, ৪ টাকা কমে নতুন দর দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ২০ পয়সা। দর কমেছে ১৩.৮৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩.৩৭ পয়েন্ট সূচক কমেছে রবির শেয়ারদর ১.২৫ শতাংশ কমায়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২.২৭ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দর ২.৩৪ শতাংশ কমায়।

এছাড়া স্কয়ার ফার্মার দর কমায় ১.৪৩ পয়েন্ট, ইউনিট হোটেলের দর কমায় ১.০৯ পয়েন্ট, বেক্সিমকো লিমিটেড ও রেনাটার দরপতনে ০.৮৪ পয়েন্ট, আইএফআইসি ব্যাংকের দরপতনে ০.৮২ পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি ও ইবিএলের দরপতনে ০.৭৭ পয়েন্ট করে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক থেকে হারিয়েছে ১৮.৭৩ পয়েন্ট।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা

এই তালিকার শীর্ষ দশের প্রায় সবগুলোর দরই বেড়েছে এক দিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই।

এর মধ্যে শীর্ষে ছিল লোকসানি সরকারি চিনিকল জিলবাংলা সুগার, যার দর বেড়েছে ৯.৯৯ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৬৫ টাকা ১০ পয়সা। এক দিনে বাড়ার সুযোগ ছিল ১৬ টাকা ৫০ পয়সা। ততটাই বেড়ে শেষ লেনদেন হয়েছে ১৮১ টাকা ৬০ পয়সায়। তবে ক্লোজ হয়েছে ১০ পয়সা কমে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৯৮ শতাংশ বেড়েছে কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের দর। ৫৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা ১০ পয়সা।

তৃতীয় অবস্থানে ছিল লোকসানি আরেক সরকারি চিনিকল শ্যামপুর সুগার। ৭৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৯.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ টাকা ১০ পয়সা।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকের দরও বেড়েছে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই। ৩১ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ টাকা ২০ পয়সা।

এছাড়া পেনিনসুলার দর ৯.৯৪ শতাংশ, এএফিসি এগ্রো বায়োটেকের দর ৯.৯১ শতাংশ, অ্যাকটিভ ফাইন ক্যামিকেলের দর ৯.৬১ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিংয়ের দর ৯.৩৬ শতাংশ, শাশা ডেনিমের দর ৯.১২ শতাংশ এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের দর ৮.৯৪ শতাংশ বেড়েছে।

আরও একটি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৭ শতাংশের বেশি, পাঁচটির দর ৬ শতাংশের বেশি, ১০টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ১৪টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৫টির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

দরপতনের শীর্ষ তালিকায় যেসব কোম্পানি

এই তালিকার শীর্ষে সিটি ব্যাংককে দেখালেও প্রকৃতপক্ষে এর দর অতটা কমেনি। ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ সমন্বয়ের পর কোম্পানির দর কমেছে ১৩.৮৭ শতাংশ।

প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বেশি ৪.৮৪ শতাংশ দর কমেছে ইমামবাটনের। এক দিনে দর পতনের সর্বোচ্চ সীচা ৫ শতাংশের কাছাকাছি আর কোনো কোম্পানি ছিল না।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৩.৯৮ শতাংশ, তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দর কমেছে ৩.৪১ শতাংশ।

এছাড়া ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.২৭ শতাংশ, ইউনিক হোটেলের দর ৩.০৫ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের দর ৩.০২ শতাংশ, রেনউেইক যগেশ্বরের দর ২.৯১ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের দর ২.৭৩ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দর ২.৫৬ শতাংশ, ক্রাইন সিমেন্টের দর ২.৫২ শতাংশ কমেছে।

এ বিভাগের আরো খবর