হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা সোনালী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমান প্রধান।
তিনি বলেছেন, ‘হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি আমরা। এই জালিয়াতি ব্যাংকটির অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারেনি। এটি ব্যাংকের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা ও শিক্ষা ছিল, যা পরে সোনালী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।’
সরকারের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির যে হিসাব তা আসলে কাগজে-কলমে বলে দাবি করেছেন আতাউর রহমান।
ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা প্রধান বলেন, ‘হলমার্ক গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি আমরা। এই জালিয়াতি ব্যাংকটির অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারেনি। এটি ব্যাংকের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা ও শিক্ষা ছিল, যা পরে সোনালী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আতাউর রহমান টাকা উদ্ধারের কৌশলও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘হলমার্কের ঘটনায় বড় ধরনের ধাক্কা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কারণে সোনালী ব্যাংকে আর কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। হলমার্কের ঘটনার পর আমরা নানা রকম আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি, এটি এখনো শেষ হয়নি। আদালতের রায়ের মাধ্যমে হলমার্কের যেসব সম্পদ আছে তা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন চিন্তা করছি, এটি কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায়।
‘এখন আমরা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি। প্রথমত, সম্পদ বিক্রি করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, কোনো ইকোনমিক জোন করে কাজে লাগানো যায় কি না। চলতি বছর বা আগামী বছর হলমার্কের বিষয়ে একটা নিষ্পত্তি হবে। আশা করছি, এখান থেকে তিন হাজার কোটি টাকা পাওয়া সম্ভব হবে।’
মূলধন ঘাটতি কাগজে-কলমে
আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের আর্থিক হিসাবে মূলধন ঘাটতির যে হিসাব আছে, তা আসলে কাগজে-কলমে ঘাটতি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কমিশন অন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) এবং বিনামূল্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা সেবাকে ব্যাংকের মুনাফা হিসেবে দেখানো হলে মূলধনের কোনো ঘাটতি থাকবে না। রূপপুর প্রকল্প থেকে কমিশন হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু আমরা পাইনি। ১৯৭২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক সরকারকে যে মুনাফা দিয়েছে তা যোগ করলে মূলধন ঘাটতি থাকবে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ ঋণদানে কোনো প্রভাব ফেলছে না। তবে এই ঘাটতি একটি বড় সমস্যা; বিশেষ করে যখন এটি দেশের বাইরের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসা বিষয় আসে। যেমন- এলসি নিশ্চিতকরণের জন্য অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়।’
‘আমাদের একটি ভালো ব্যালেন্স শিট দরকার। আমরা যদি মূলধনের ঘাটতি পূরণ করতে পারি, তাহলে আমরা সব ক্ষেত্রেই ভাল থাকব। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিনটি প্রস্তাব জমা দিয়েছি। সেগুলো বিবেচনা করা হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।’
প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে ৩১.১৮ শতাংশ
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আতাউর রহমান প্রধান।
তিনি বলেন, গত বছর জানুয়ারি-মার্চে পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৩৩ কোটি টাকা, যা চলতি বছরে একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৫৬৮ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। আর আমানত বেড়েছে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। গত মার্চে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা।
‘আমাদের মোবাইল অ্যাপসে গ্রাহক এখন এক লাখ ৯৫ হাজারের বেশি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন সম্পাদিত হয়েছে। ৩ মাসে নতুন করে ৫৮ হাজার গ্রাহক নিবন্ধন করেছে। আর ৩ মাসে ৬৩ হাজার নতুন ডেবিট কার্ড ইস্যু হয়েছে। এতে কার্ড গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার। এখন শতাধিক এটিএম বুথ রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে সব উপজেলায় একটি করে এটিএম বসানোর লক্ষ্য রয়েছে।’
মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মুরশেদুল কবীর, নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ, মজিবর রহমান, সঞ্চিয়া বিনতে আলী এবং কামরুজ্জামান খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১১ সালে হলমার্কসহ ৫টি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (হোটেল শেরাটন) শাখা থেকে ঋণের নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যা নিয়ে তখন বড় আলোচনা তৈরি হয়। বাতিল করা হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আটক করা হয় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও হলমার্কের মালিকদের। সেই ঘটনার বিচারকাজ এখনো চলছে।