ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। যুদ্ধে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটা কিংবা জোগান কমে যাওয়ার শঙ্কায় রোধ করা যায়নি অনেক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। ডিমের ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ব্লার্ড ফ্লুর মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে ডিমের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় টান পড়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্যটির চালান ব্যাহত হয়েছে।
এ দুই কারণের বাইরে খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইস্টার সানডে এবং ইহুদিদের পাসওভারকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে ডিমের চাহিদা বেড়েছে, যা প্রভাব ফেলেছে দামের ওপর।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে প্রোটিনের তুলনামূলক অনেক দামি উৎস মাংসের তুলনায় কম মূল্যের ডিমের ওপর নির্ভরশীল ভোক্তাদের ওপর।
ব্লার্ড ফ্লুর মারাত্মক সংক্রমণ
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্য সরকারগুলোর ডাটা বিশ্লেষণ করে রয়টার্স দেখেছে, দেশটির বাণিজ্যিক খামারগুলোতে বার্ড ফ্লুর বলি হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি ডিমপাড়া মুরগি। ভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাব ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে মারাত্মক।
এদিকে সর্বকালের সবচেয়ে মারাত্মক বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখছে ফ্রান্স। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশটিতে প্রায় ৮ শতাংশ ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হয়েছে।
ব্লার্ড ফ্লু প্রায়ই ছড়ায় বন্যপাখির মাধ্যমে। কোনো দেশে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সংক্রমণ রোধে একটি খামারের সব মুরগি কিংবা হাঁসের মতো প্রাণী হত্যা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্সে দাম কেমন বেড়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনকারী অঙ্গরাজ্য আইওয়ায় বার্ড ফ্লুর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। অঙ্গরাজ্যটিতে ১ কোটির বেশি ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হয়েছে। অন্যদিকে নেব্রাস্কায় ১৭ লাখের বেশি ডিমপাড়া মুরগি নিধন করা হবে।
সংক্রমণ রোধে ডিমপাড়া মুরগি নিধনের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। দেশটির মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে মার্চে এক ডজন বড় ডিমের দাম পাইকারিতে ৩ ডলার ছাড়ায়। ওই অঞ্চলগুলোতে পণ্যটির দাম এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়ে যায়।
ফ্রান্সে পাইকারিতে ডিমের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। এর প্রভাব ডিম দিয়ে বানানো অন্য পণ্যগুলোর ওপরও পড়ছে।
বাংলাদেশের ওপর মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কি আছে
বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছরেই ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে সময়ে দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা মেটাতে ডিমের প্রয়োজন ছিল ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ পিস। ওই অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ১ হাজার ৭৩৬ কোটি ৪৩ লাখ পিস।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ পিস। ফেব্রুয়ারিতে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ২০৬ কোটি ৯৮ লাখ পিস।
দেশে ডিম আমদানিতে কড়াকড়ি রয়েছে। এরপরও মাঝে মাঝে কিছু প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করে থাকে।
বিশ্ববাজারে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির খবরের মধ্যে রাজধানীতে পণ্যটির দাম কমার খবর পাওয়া গেছে। মগবাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে।
ওই এলাকায় গত সপ্তাহে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১১৫ টাকা। বর্তমানে সেটি ১০০ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।