বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হঠাৎ চড়া ডলারের দাম

  •    
  • ১৭ আগস্ট, ২০২১ ২৩:৪৩

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে ১০ পয়সা দর হারিয়েছে টাকা। মহামারি করোনাভাইরাসের কঠিন সময়েও গত এক বছরে ডলারের দর বাড়েনি বা কমেনি। এর আগে বাংলাদেশে কখনও এতো দীর্ঘ সময় ধরে টাকা-ডলারের বিনিময় হার একই থাকেনি।

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। খোলাবাজারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও দাম বাড়ছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ১০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকা। গত ১০ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক মার্কিন ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা খরচ করতে হয়। মঙ্গলবার সেই এক ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক মঙ্গলবার ৮৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। কিনেছে ৮৪ টাকা ৬০ পয়সায়। এ দিন খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সায়। ক্রয় মূল্য ছিল ৮৭ টাকা ২০ পয়সা।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান একই জায়গায় স্থির ছিল। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য এখন গুণতে হতো ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।

মহামারি করোনাভাইরাসের এই কঠিন সময়ে ডলারের দর বাড়েওনি, কমেওনি। এর আগে বাংলাদেশে কখনও এতো দীর্ঘ সময় ধরে টাকা-ডলারের বিনিময় হার একই থাকেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনার ফলে টাকার মান স্থিতিশীল রয়েছে। এর ফলে রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। টাকার মান বেড়ে গেলে অর্থনীতির এই দুই সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

গত বছর দেশে করেনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার একদিন আগে ২৫ মার্চ টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। ৩০ জুন তা কমে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে আসে। এরপর থেকে ১ ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ পয়সাই লাগছে।

কিন্তু ৯ আগস্ট থেকে হঠাৎ করেই ডলারের দর বাড়তে শুরু করে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সে কারণেই দীর্ঘদিন পর দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান নিউজবাংলাকে বলেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি উন্নতি না হলেও উৎপাদন কর্মকাণ্ড পুরোদমে চলছে। সে কারণে আমদানি বেশ বেড়ে গেছে। আর তাই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডলারও নড়াচড়া শুরু করেছে।

খোলাবাজারের ডলার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, কোরবানির ঈদের পর লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকেই ডলারের দাম বাড়ছে। ৮৬ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি বাড়ায় ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বেশি না বাড়লে উদ্বেগের কিছু নেই।’

মহামারির সঙ্কটকালে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

ডলার কেনায় রেকর্ড

এদিকে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সবমিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে অর্থাৎ টাকার মূল্য বাড়ানো ঠেকাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে এ ডলার কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছর জুড়েই বাজার থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বছর শেষে যার অঙ্ক গিয়ে ঠেকেছে ৭ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরেও ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৫০ কোটি ডলারের মতো কেনা হয়েছে।

মহামারির মধ্যে ব্যবসায় মন্দাজনিত কারণে আমদানি কমে যায়। পাশাপাশি, প্রাবসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন এবং রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ডলার জমা হতে থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ডলার কেনার এই রেকর্ড গড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু ডলারের বিপরীতে বড় অংকের টাকা বাজারে সরবরাহ করতে হচ্ছে। এর জের ধরে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়েছে। সেই অতিরিক্ত তারল্য এখন বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিভাগের আরো খবর