চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাসে দুই দিনের ক্ষেত্রে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) থেকে লাগছে ৬ থেকে ৭ দিন। বন্দরের তুলনায় খরচও বেশি। এ অবস্থায় বেসরকারি আইসিডির পরিবর্তে বন্দর থেকেই পণ্য খালাস করতে চায় বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিকারক ও মালিক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বেসরকারি আইসিডি থেকে শতভাগ আমদানি পণ্য খালাসের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারকে দেয়া পত্রে এ দাবির কথা জানিয়েছে বিজিএমইএ।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, লকডাউনসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বন্দরের পাশাপাশি বেসরকারি আইসিডি থেকে শতভাগ আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার খালাসের সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি আইসিডিগুলো থেকে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য খালাস হলেও গত ২৫ জুলাই থেকে সব ধরনের পণ্য বোঝাই কন্টেইনার আইসিডি থেকে খালাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহে প্রায় ১৫ হাজার কন্টেইনার ১৯টি আইসিডিতে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। এতে জট কমে যায়। বন্দরের কাজে গতি আসে। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যাও শূন্যতে নেমে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি আইসিডির পরিবর্তে বন্দর থেকেই কন্টেইনার খালাসের আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। চিঠিতে বেসরকারি আইসিডিগুলোতে আমদানিকৃত কন্টেইনার নিয়ে সংকটে থাকার তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
চিঠির ব্যাপারে রোববার বিস্তারিত জানান বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের কাছে পাঠানো বিজিএমইএর পত্রে বলা হয়, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালবাহী কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে খালাস করতে পোশাক শিল্প মালিকদের সময় লাগত দুই দিন। ২৫ জুলাইয়ের পর থেকে বেসরকারি আইসিডিগুলো থেকে সেই কন্টেইনার খালাস করতে সময় লাগছে ৬ থেকে ৭ দিন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রাইভেট আইসিডিতে কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএসের বিপরীতে ১১ আগস্ট ৬০ হাজার ৫০২ টিইইউএস হয়েছে। প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে পর্যাপ্ত স্থান, ইকুইপমেন্ট ও শ্রমিক স্বল্পতায় মালামাল খালাসে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে আইসিডি থেকে কন্টেইনার খালাস করতে বন্দরের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।
আইসিডিগুলোতে প্রতি কন্টেইনারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে তা বন্দরের তুলনায় অনেক বেশি। এতে সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি ব্যয়ের কবলে পড়ছে। একই সঙ্গে পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণেও প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমান সংকটময় সময়ে তা আরও বড় সংকট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়, পোশাক শিল্পের কাঁচামালবাহী আমদানিকৃত ২০ ফুটের একটি কন্টেইনার বন্দর থেকে খালাসে ৪ হাজার ২৭৭ টাকা খরচ হয়। অথচ বেসরকারি আইসিডি থেকে তা খালাস করতে ১৩ হাজার ৭৫৫ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। একইভাবে ৪০ ফুটের একটি কন্টেইনার বন্দর থেকে খালাস করতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯৯৮ টাকা। আইসিডি থেকে খালাসে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৯২ টাকা।
পোশাক শিল্পের আমদানি করা পণ্য চালান দ্রুত খালাসে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বন্দর থেকে পণ্য চালান খালাস দিন দিন বাড়ছে। বন্দর জেটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় সময়ক্ষেপণ রোধ এবং অতিরিক্ত খরচের কবল থেকে রক্ষা করতে বেসরকারি আইসিডির পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি খালাসের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
এ ব্যাপারে বেসরকারি আইসিডিগুলোর সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘আমরাও কাস্টমস কমিশনারকে একটি পত্র দিয়েছি। সেখানে বলা হয়, বিজিএমইএ যে দাবি করেছে তা সঠিক নয়। তারা খরচ এবং সময়ের যে তথ্য উপস্থাপন করেছে তা সঠিক নয়।
‘প্রকৃতপক্ষে ২০ ফুটের একটি কন্টেইনার আমাদের আইসিডি থেকে খালাস করতে ব্যয় হয় ৭ হাজার ৯৩০ টাকা। ৪০ ফুটের কন্টেইনারের ক্ষেত্রে আমাদের এখানে খরচ হয় ৯ হাজার ১৫০ টাকা। প্রতি কন্টেইনারে ৩ হাজার টাকার মতো পার্থক্য থাকে। আর বন্দর থেকে আনতে দুই দিন লাগলে তৃতীয় দিনেই বেসরকারি আইসিডি থেকে কন্টেইনার খালাস করার সুযোগ রয়েছে।’
বেসরকারি আইসিডিগুলোতে সপ্তাহের সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।