বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অতিরিক্ত তারল্য: কত সুদে টাকা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  •    
  • ৯ আগস্ট, ২০২১ ০৮:১৮

ব্যাংকের হাতে অলস তারল্যের বিপরীতে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। এ অবস্থায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করে যে অর্থই পাওয়া যাবে, সেটি ব্যাংকের জন্য মঙ্গল। কলমানি বাজারের সুদহার এখন ১ শতাংশের নিচে। সরকারি ট্রেজারি বিলের ইল্ডহারও ১ শতাংশের বেশি নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ এর ইল্ড অনেক বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক নয়: বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম

ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিতে যে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব একটা আকর্ষণীয় হারে সুদ দেবে এমন নয়। তার পরেও যেহেতু একেবারেই অলস অর্থ সেখানে বিনিয়োগ করা হবে, সে কারণে যাই পাওয়া যাবে, সেটিই ব্যাংকের লাভ।

করোনায় ব্যাংকের উপচে পড়া মুনাফা বিস্ময় জাগিয়েছে। এর মধ্যে একেবারে অলস বসে থাকা টাকা থেকেও যদি কিছুটা আয় হয়, সেটিও তাদের কোষাগারকে কিছুটা হলেও স্ফীত করবে।

এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত তারল্য আছে, যার মধ্যে ৬২ হাজার কোটি টাকা একেবারেই অলস। এই টাকা বসিয়ে রেখে এক পয়সাও আয় হচ্ছে না ব্যাংকগুলোর।

ব্যাংকে অলস অর্থ পড়ে থাকার চেয়ে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করা ভালো বলে মনে করেন মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত তারল্য অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সুদহার কী হবে তা স্পষ্ট নয়।’

সুদহার কত হবে

২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর নিলামে নামমাত্র সুদে একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ধার দেয়। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর অতিরিক্ত তারল্য আছে। ফলে আমানতের সুদহার তলানিতে নেমেছে। এতে আমানতকারীরাও অস্বস্তির মধ্যে আছে। তাই সব কিছু চিন্তা করে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, “ব্যাংকের হাতে অলস তারল্যের বিপরীতে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। এ অবস্থায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করে যে অর্থই পাওয়া যাবে, সেটি ব্যাংকের জন্য মঙ্গল। কলমানি বাজারের সুদহার এখন ১ শতাংশের নিচে। সরকারি ট্রেজারি বিলের ইল্ডহারও ১ শতাংশের বেশি নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ এর ইল্ড অনেক বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক নয়।”

তবে সুদহার খুব বেশি কম হলে ব্যাংকগুলো টাকা দিতে চাইবে না বলে মনে করেন মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড এখনো ৫ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো ১/২ শতাংশ ইল্ডে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। চোখের সামনে বিনিয়োগের বিকল্প খাত থাকলে ব্যাংকাররা বিল-বন্ডমুখী হবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে এর বিপরীতে সুদহার কম রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সুদহার কম না হলে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশি বিনিয়োগ করতে চাইবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ মুদ্রাবাজারে তারল্যের জোগান ও বাজার থেকে তারল্য তুলে নেয়ার কাজ করে। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক খাত থেকে ঋণের জোগান দেয়ার দায়িত্বও পালন করে বিভাগটি।

ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্য বলছে, ২ আগস্ট ৯১ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে এক হাজার কোটি টাকা তোলা হয়।

ওইদিন এ বিলের ইল্ডহার ছিল দশমিক ৫৫ শতাংশ। একই দিন অনুষ্ঠিত ৩৬৪ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ইল্ডহার ছিল ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরপর ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলামে ইল্ডহার ছিল ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

দুই বছর আগেও এ ধরনের বিল ও বন্ডের ইল্ডহার ৫ শতাংশের বেশি ছিল।

এ পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’- এর ইল্ডহার ১ শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন ব্যাংকাররা।

নিলাম কবে

‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম হবে।

চলতি আগস্ট মাসেই হবে আরও ৮টি নিলাম। সবমিলিয়ে এ মাসে ৯টি নিলাম হবে। তবে এই নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে মোট কত টাকা তুলে নেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সর্বশেষ ব্যাংকগুলো থেকে এভাবে টাকা তুলে নেয়া হয়েছিল।

৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি এসব বিলের ইল্ডহার নির্ধারিত হবে ব্যাংকগুলোর বিডিংয়ের ওপর। অর্থাৎ বিলের চাহিদার ভিত্তিতেই অকশন কমিটি ইল্ডহার নির্ধারণ করবে।

৯, ১৬ ও ২৫ আগস্ট ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের ৬টি নিলাম হবে। আর ১১, ২৩ ও ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ৩০ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম।

ইতোমধ্যে এ সব নিলামের বিস্তারিত গত বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশে নিবাসী সকল ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বিড করতে পারবেন।

যে কারণে এই নিলাম

ইতিহাসের সর্বোচ্চ তারল্য এখন ব্যাংক খাতে। তলানিতে নেমে গেছে আমানতে সুদহার। মহামারির আগে যেসব ব্যাংক গ্রাহকদের ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য ৬ শতাংশ সুদ দিত, তারাই এখন সুদহার এক-দেড় শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় অলস টাকার পরিমাণও বাড়ছে। আবার ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহেও আগ্রহী হচ্ছেন না। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে।

এমন অবস্থায় বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে আড়াই বছর পর ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর নিলাম হতে যাচ্ছে। এতে করে ব্যাংকগুলো আবার আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আবার এরই মধ্যে নির্দেশ এসেছে, প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব ছাড়া অন্য হিসাবে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। এখন মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফলে আমানতের সুদহার অন্তত ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ হতে হবে।

বাজার থেকে টাকা তোলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব পন্থা

বাজার থেকে টাকা তুলতে বেশ কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো—রিভার্স রেপো, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ও নগদ জমার হার (সিআরআর)। এর মধ্যে প্রথম দুটির মাধ্যমেই ব্যাংকগুলোর সুদ আয় বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ।

আর ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ সুদহার বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে তা কলমানির সুদহারের চেয়ে কিছুটা কম হয়। বর্তমানে ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ চালু রয়েছে। এর মানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে টাকা জমা রাখতে পারবে।

প্রণোদনার ঋণ ছাড়া নতুন ঋণ চাহিদা নেই বললেই চলে। মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

এ সব কারণেই ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত টাকা জমা হয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে, জুন শেষে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা একেবারেই অলস; অর্থাৎ এই টাকা থেকে কোনো ধরনের সুদ বা মুনাফা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

বাকি টাকায় কেনা হয়েছে বিভিন্ন বিল ও বন্ড। অনেক ব্যাংক অলস টাকার অপব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ আছে।

এ বিভাগের আরো খবর