বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদেশি সহায়তা ছাড়িয়ে গেছে ৭ বিলিয়ন ডলার

  •    
  • ২ আগস্ট, ২০২১ ০৮:২৬

সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে মোট ৭১১ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এটি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এত বেশি বিদেশি সহায়তা আর কখনো আসেনি।

করোনাভাইরাস মহামারিতে নানা দুঃসংবাদের মধ্যে অর্থনীতিতে স্বস্তিদায়ক একটি খবর এসেছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ দুর্বল হলেও বিদেশি সহায়তায় সুবাতাস বইছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরপর দুই অর্থবছর বিদেশি সাহায্য ঋণ-অনুদান মিলে ৭০০ কোটি ডলার (৭ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে।

দেশের অর্থনীতিবিদরা এই প্রবণতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন।

সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে মোট ৭১১ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেছে, বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ঋণের অংশই বেশি, যার পরিমাণ ৬৭৭ কোটি ডলার। অবশিষ্ট অংশ অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।

এর আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে পাওয়া গিয়েছিল ৭২৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৬৭৪ কোটি ডলার। বাকিটা অনুদান।

মূলত করোনার মধ্যেই বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা ও বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর কারণে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপানসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বেশি ঋণ এসেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এত বেশি বিদেশি সহায়তা আর কখনো আসেনি। করোনার আগে গত কয়েক বছর ধরে গড়ে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়া যেত।

‘এখন তা ৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এটি আমাদের জন্য বড় অর্জন।’

করোনা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, এডিবি বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার আশা করছে নতুন অর্থবছরেও প্রত্যাশিত বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। ফলে এবারও বিদেশি ঋণ রেকর্ড ছাড়াবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকল্পের বিপরীতে ঋণের চেয়ে বাজেট সহায়তা সরকারের সবচেয়ে বড় সুবিধা। কারণ বাজেট সহায়তার টাকা করোনা প্রতিরোধসহ প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো শর্ত লাগে না। এ জন্য বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা পেতে আগ্রহী সরকার।

প্রতিশ্রুতি ছিল আরও বেশি

সহায়তার পরিমাণ বাড়লেও প্রতিশ্রুতি ছিল আরও বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদায়ি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল ৯৩৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৭১১ কোটি ডলার।

অর্থাৎ প্রতিশ্রুত সহায়তার চেয়ে কম এসেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। এর আগের বছরে একই পরিমাণ সহায়তা কম এসেছিল।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিশ্রুতি মানে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি। আর সহায়তা পাওয়া মানে অর্থছাড়।

শর্ত পালনে জটিলতাসহ নানা কারণে অর্থ ছাড়ে দেরি হয়। এ জন্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাহায্য পাওয়া যায় না।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো খবর। তবে খেয়াল রাখতে হবে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ এখনও দুর্বল।’

তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। চলতি অর্থবছরও এর প্রভাব থাকবে। ফলে বিশাল বাজেট অর্থায়নে আরও বেশি বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে সরকারকে।

করোনাকালে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ জুন নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়ে এ বাজেট বাস্তবায়নের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিদেশি সহায়তার উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়।

সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। সে জন্য বাজেটে অর্থায়নে আরও বেশি বিদেশি সহায়তার দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে।

‘পাইপলাইনে (ছাড়যোগ্য বৈদেশিক সাহায্য) অনেক অর্থ আটকে আছে। ওই অর্থ ছাড়ের জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এখান থেকে কিছু অংশ ছাড় হলে সরকারের বাড়তি ব্যয়ের চাহিদা পূরণ করা যাবে।’

ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে পাইপলাইনে পুঞ্জিভূত সহায়তার পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা হলে দ্রুত ছাড় হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পাইপলাইনে যে পরিমাণ সহায়তা আছে, তার ১০ শতাংশ অর্থ ছাড় করতে পারলে বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে। ফলে এ দিকে সরকারকে আরও মনোযোগ দেয়া উচিত।

ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া শর্ত পালন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়। এসব কারণে পাইপলাইনে পুঞ্জিভূত অর্থের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বেশি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করছি এবার বিদেশি সহায়তাও আরও বাড়বে।’

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য ক্রমশ হ্রাস পেলেও এখনও উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের ৩০ শতাংশ বিদেশি সহায়তার মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এক দশক আগে এর অংশ ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।

করোনাকালীন বাড়তি ব্যয় মেটানোর লক্ষ্যে ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি প্রাক্কলন করে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়।

চলতি বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় প্রায় ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যা বিদায়ি অর্থবছরে ছিল ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

এবারের এডিপিতে ১ হাজার ৫৩৮টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬৫টি।

বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তা পায়। বহুপক্ষীয় সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয় বিশ্বব্যাংক। আর দ্বিপক্ষীয়র মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ দেয় জাপান।

বর্তমানে ঋণ ও অনুদান দুটোই বাংলাদেশ পায়। তবে অনুদানের অংশ কম। এটা মোট সহায়তা প্রাপ্তির ৪ থেকে ৫ শতাংশ। অবশিষ্ট সিংহভাগ ঋণ হিসেবে দেয় উন্নয়ন সহযোগীরা।

আগে খাদ্য সহায়তার নামে কিছু অর্থ আসত। এখন পুরো টাকা প্রকল্প সাহায্যের নামে আসে।

ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ যে ঋণ নেয়, তার বেশির ভাগই মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে। এসব ঋণ নমনীয়। এ কারণে সুদ পরিশোধে চাপ কম থাকে।

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বমানের বলেও জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর