বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহামারি সামাল দিতে এবারও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২১ ২৩:৫৬

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে বা হবে, তা পুনরুদ্ধারের দিক-নির্দেশনা থাকবে নতুন মুদ্রানীতিতে।

দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য সামনে রেখে নতুন মুদ্রানীতি আসছে। গতবারের মতো এবারও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধ অথবা বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের এই মুদ্রানীতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, গত দুইবারের মতো এবারও পুরো অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি দেয়া হবে।

মহামারির এই কঠিন সময়ে নতুন মুদ্রানীতি কেমন হবে-এ প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে বা হবে, তা পুনরুদ্ধারের দিক-নির্দেশনা থাকবে নতুন মুদ্রানীতিতে।’

মুদ্রানীতি তৈরির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হবে নতুন মুদ্রানীতিতে। নীতি সুদহার ও সিআরআর কমিয়ে রাখার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। তবে এসব নীতিসহায়তার কারণে তৈরি হওয়া উদ্বৃত্ত তারল্য যেন অনুৎপাদনশীল খাতে গিয়ে মূল্যস্ম্ফীতির ওপর চাপ তৈরি না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা হবে।

তারা বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারই মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি থাকবে কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের তাগিদ। সব দিক সামাল দিতে এবারও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতিই ঘোষণা করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি (জুলাই-ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি-জুন) ঘোষণা করে আসছিল। কিন্তু ‘বিশেষ তাৎপর্য’ নেই বলে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছে।

এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও গতবার মহামারির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়। এর সংক্ষিপ্তসার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারেও প্রকাশ করা হয়।

এবারও তাই করা হবে বলে সিরাজুল ইসলাম জানান।

প্রতিবছর মুদ্রানীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেয়া হয়। তবে করোনার কারণে এবারও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন না করে মেইলে মতামত নেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মতামত নেয়া হয়। গত ১০ জুলাই ছিল মতামত দেয়ার শেষ দিন।

মহামারিকালে কেমন মুদ্রানীতি প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে বেশি জোর দিতে হবে। বাজারে টাকার প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে, যাতে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তাই নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা আরো সম্প্রসারণমুখী হওয়া দরকার।’

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছে সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য অর্জনকে সামনে রেখে কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই হবে প্রধান লক্ষ্য।

জানা গেছে, মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধির পথ অনুসরণ করা হবে। সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগান বাড়ানো হবে উৎপাদন ও ব্যবসা খাতে। এর মধ্যে বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকেও গুরুত্ব দেয়া হবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের ঋণের জোগান দেয়াতেও গুরুত্ব থাকবে।

এদিকে গত অর্থবছরের মুদ্রানীতি বাজারে টাকার প্রবাহ, সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই অর্জিত হয়নি।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্য ধরা হয় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত মে পর্যন্ত বার্ষিক ঋণপ্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা স্মরণকালের সর্বনিম্ন। নতুন বিনিয়োগ কম হওয়ায় আগামীতেও ঋণপ্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারপরও বেসরকারি ঋণ উৎসাহিত করতে ১৪ শতাংশের ওপর এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে বলে জানা গেছে।

ব্যাপক মুদ্রার জোগানও ১৫ শতাংশের মধ্যে রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ (ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ) বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু গত এপ্রিল পর্যন্ত বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

গত অর্থবছরের জন্য সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রাক্কলন করা হলেও সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর ঋণ পাওয়ায় সরকার ব্যাংক থেকে নিয়েছে অনেক কম। মে পর্যন্ত সরকারের নিট ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ২১ শতাংশ।

সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে পদক্ষেপ থাকতে হবে। ঋণ বিতরণে বেশি জোর দিতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি খাতে। রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও হালকা প্রকৌশলের মতো খাতে জোর দেয়ার মাধ্যমে বহুমুখী করতে হবে। ব্যাংক খাতে এখন প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এই অর্থ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর নির্দেশনা দিতে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমুখী হওয়া উচিত। গেল অর্থবছরে যে মুদ্রানীতি ছিল, সেটার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। বেসরকারি ঋণ বাড়ানোর জন্য স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর